বাংলাদেশের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী সহিংসতার শিকার, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে তথ্য প্রকাশ
১৫ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ইউএনএফপিএ - প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল কর্তৃক আজ প্রকাশিত একটি জরিপ সারা দেশে নারী ও মেয়েদের উপর সহিংসতার ভয়াবহ মাত্রা প্রকাশ করেছে। ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’ এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আজ প্রকাশিত হলো, যার প্রাথমিক তথ্য উপাত্তগুলি এই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
এই জরিপে জাতিসংঘের সংজ্ঞায়িত সহিংস আচরণগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সহিংসতামূলক আচরণও পরিমাপ করা হয়েছে। জরিপটি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশনা তুলেধরে – যেখানে সহিংসতা প্রতিরোধে জরুরিবি নিয়োগ, পরিষেবা শক্তিশালী করণ ও বিচার প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি জেন্ডার সমতা এবং মানবাধিকারের ভিত্তিতে একটি সহায়ক আইনি ও নীতিগত পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানানো হয়েছে।
জরিপে দেখা যায় যে প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী (৭৬%) তাদের জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গী বা স্বামী কর্তৃক সহিংসতার শিকার হয়েছেন—যার মধ্যে রয়েছে শারীরিক, যৌন, মানসিক এবং অর্থনৈতিক সহিংসতা, পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ। প্রায় অর্ধেক নারী (৪৯%) গত এক বছরে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। উদ্বেগ জনকভাবে, তিনজনের মধ্যে দুজন ভুক্তভোগী (৬২%) তারা যে সহিংসতার মুখোমুখি হন, তা কখনোই প্রকাশ করেননি।
এই জরিপে নন-পার্টনার দ্বারা সহিংসতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে: ১৫% নারী ১৫ বছর বয়স থেকে নন-পার্টনার কাছ থেকে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং ২.২% যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জরিপটিতে, 'জীবনসঙ্গী' বলতে বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী এবং 'নন-পার্টনার' বলতে বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী ব্যতীত অন্য যে কোন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
“এটি বাংলাদেশে এ ধরনের সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরের জরিপ। রিপোর্টটি সহিংসতার ব্যাপকতা ও প্রভাব সম্পর্কে দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত প্রদান করে, যা নীতি প্রণয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,”—বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বকালে বলেন। তিনি আরও যোগ করেন, “ভবিষ্যতে আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিবিএস-এর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা আরও বৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
যদিওকিছুঅগ্রগতিহয়েছে—যেমনসাম্প্রতিকস্বামীদ্বারাসহিংসতারসামগ্রিকপ্রাদুর্ভাব২০১৫সালের৬৬% থেকেকমে২০২৪সালে৪৯%-এনেমেএসেছে—তথাপিজরিপটিনারী এবং সমাজের ওপর সহিংসতার চলমান প্রভাবও তুলে ধরেছে। চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার জন্য নারীদের এখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, অন্যদিকে ক্ষতিকর সামাজিক রীতিনীতি অনেক নারীকে নীরব থাকতে বাধ্য করেছে।
জরিপথেকেপ্রাপ্ততথ্য উদ্বেগজনক:
-
অর্ধেকেরও বেশি নারী (৫৪%) জীবদ্দশায় স্বামীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬০% গত ১২ মাসে একাধিকবার সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
-
গর্ভাবস্থায়, বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৭.২% শারীরিক সহিংসতার এবং ৫.৩% যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
-
নন-পার্টনার কর্তৃক শারীরিক সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা সবচেয়ে বেশি জড়িত। অপরদিকে, নন-পার্টনার কর্তৃক যৌন সহিংসতার অধিকাংশ ঘটনাই নারীদের পরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে—যেমন পুরুষ আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিতজন।
-
৮.৩% নারী প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত নির্দিষ্ট কিছু জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার (Technology-Facilitated Gender-Based Violence) শিকার হয়েছেন, যা যৌন ব্ল্যাকমেইল, ছবি নিয়ে অপব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
-
পরিষেবাচাওয়ারহারউদ্বেগজনকভাবেকম, যেখানেমাত্র১৪.৫% সহিংসতারশিকারনারী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। স্বামীরদ্বারা সহিংসতার শিকারনারীদেরমধ্যে৭.৪% আইনিপদক্ষেপনিয়েছেন, এবংঅধিকাংশক্ষেত্রেইস্থানীয় নেতার কাছ থেকেই সহায়তা চেয়েছেন। অন্যদিকে, নন-পার্টনার দ্বারা সহিংসতার শিকারনারীদেরমধ্যেমাত্র৩.৮% আইনিপদক্ষেপনিয়েছেন, এবংসবচেয়েবেশি পুলিশের কাছ থেকেই আইনি সহায়তা চেয়েছেন।
-
২ জনের মধ্যে ১ জনেরও কম নারী (৪৮.৫%) জানেন যে কোথায় সহিংসতার অভিযোগ জানাতে হয়, এবং মাত্র ১২.৩% নারী সহিংসতার সহায়তাকারী হেল্পলাইন ১০৯ সম্পর্কে অবগত।
-
স্বামী দ্বারা সহিংসতার ক্ষেত্রে কম বয়স, যৌতুক প্রথা, স্বামীর মাদকাসক্তি বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, এবং শহুরে বস্তিতে বসবাস নারীদের সহিংসতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া, নন-পার্টনার সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীর কম বয়স, সীমিত শিক্ষা এবং প্রতিবন্ধিতা (functional difficulty) প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
-
এই তথ্যগুলো জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুমআরাবেগম, বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মিসেস আলেয়া আক্তার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিসেস শবনম মুস্তারি।
-
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, “এটা প্রমাণিত যে, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা একটি ব্যাপক মানবাধিকার সংকট। এই পরিসংখ্যান গুলোর আড়ালে হাজার হাজার নারী রয়েছেন যারা সাহসের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। এই জরিপটি অবশ্যই সহিংসতা প্রতিরোধ, পরিষেবা শক্তিশালীকরণ এবং সারভাইভারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার রূপান্তরকারী পদক্ষেপের সূচনা হওয়া উচিত।”
-
অনুষ্ঠানে একটি প্যানেল আলোচনারও আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন উইমেন'স অ্যাফেয়ার্স রিফর্ম কমিশনের চেয়ারপার্সন মিসেস শিরীন হক, বিশেষ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার। তারা সকলে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে প্রমাণ-ভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনএবংএরসারসংক্ষেপডাউনলোডকরতে, দয়াকরেইউএনএফপিএবাংলাদেশ (UNFPA Bangladesh) এর VAW সংক্রান্তপৃষ্ঠাটিভিজিটকরুন:
গণমাধ্যম অনুসন্ধানের জন্য যোগাযোগ করুন:
| মিনাক্ষী বিশ্বাস, ডেপুটিডিরেক্টর এবং প্রজেক্টডিরেক্টর ইনটেগ্রেটিং জিওস্পেশিয়াল- ইনফরমেশন উইথ জেন্ডার অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ফোন: +৮৮০১৫৫০০৪১৩৬০ |
গুলালেক সোলতানভা, |