বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস (ইউএনআরসি)

জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী (আরসি) ব্যবস্থা জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে একজোট করে কর্মদক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি জাতিসংঘ ব্যবস্থায় সমন্বয় ও সংহতি নিশ্চিতে সহযোগিতা করে। একটি দেশের উন্নয়নে জাতিসংঘের অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ করতে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে নেতৃত্ব জোরদার, নীতি এবং কর্মসূচির প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে কাজ করে আবাসিক সমন্বয়কারী।

বাংলাদেশে কোভিড–১৯ মহামারির প্রভাব কাটাতে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও কৌশলগত পরিকল্পনা – "রূপকল্প - ২০৪১ অর্জনে" অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করতে জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম ও সরকার ইউএন সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২–২০২৬ স্বাক্ষর করেছে। ইউএনএসডিসিএফ হলো একটি কাঠামো বা  নির্দেশিকা যা জাতিসংঘ ব্যবস্থায় কৌশলগত দর্শন উপস্থাপন করে, সমাজের সার্বিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে, টেকসই উন্নয়নের পরিবেশ তৈরিসহ বাংলাদেশের সার্বিক টেকসই উন্নয়নে জাতিসংঘ ব্যবস্থার ভূমিকা ও অবদানের পথরেখা নির্দেশক।

 

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী

জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী হলেন একটি দেশের জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি। আবাসিক সমন্বয়কারীরা বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ কান্ট্রি টিমকে নেতৃত্ব দেন এবং এজেন্ডা–২০৩০ বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সহায়তা সমন্বয় করেন। আবাসিক সমন্বয়কারী জাতিসংঘ মহাসচিবের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি এবং মহাসচিবের কাছেই তারা জবাবদিহি করেন।

জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীদের মূল দায়িত্ব:

  • আবাসিক সমন্বয়কারী একটি রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধিত্ব করেন পাশাপাশি তিনি একটি দেশের অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এসডিজি) অর্জনে জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থার সহযোগিতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকার, নাগরিক সমাজ, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অংশীদার, শিক্ষাবিদ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার পথ অনুসন্ধান করেন;
  • এজেন্ডা – ২০৩০ অর্জনে একটি দেশের প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের সহযোগিতা জোরদারে বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করেন;
  • মানবাধিকার ও জেন্ডার সমতা রক্ষা ও পিছিয়ে পড়া মানুষদেরও অন্তর্ভূক্ত করে এসডিজির প্রতিশ্রুতির প্রচারসহ জাতিসংঘ সনদের মৌলিক মূল্যবোধ, মানদণ্ড ও মূলনীতির প্রচার–প্রচারণার ব্যবস্থা করেন;
  • বিভিন্ন দেশে সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জাতিসংঘ কান্ট্রি টিমকে (ইউএনসিটি) নেতৃত্ব দান এবং সরকারের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জাতিসংঘের কৌশলগত সাড়াদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন;
  • সরকারের সঙ্গে পূর্ণ আলোচনার ভিত্তিতে এবং বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে নানাভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইউএন কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও এ ব্যাপারে অগ্রগতির বিস্তারিত জানাতে ইউএনসিটিকে নেতৃত্ব ও সহযোগিতা দেন;
  • অনাবাসিক সংস্থাসহ (এনআরএ) ইউএনসিটি সদস্যদের নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জনে সংস্থাগুলোর কাজে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন;
  • যেসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন এবং পৃথকভাবে মানবিক সহায়তা সমন্বয়ক (এইচসি) বা নেতৃত্ব দানকারী সংস্থা নির্ধারণ করা হয়নি, সেসব ক্ষেত্রে জাতিসংঘের প্রচেষ্টাগুলো এবং সংশ্লিষ্ট মানবিক সহায়তা দানকারী ব্যক্তি ও সংস্থাকে নেতৃত্ব প্রদান করেন ও তাদের কাজ সমন্বয় করেন;
  • সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল কিংবা সংঘাত পরবর্তী পরিস্থিততে সহনশীলতা, প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং রূপান্তরমূলক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অথবা রাজনৈতিক মিশনের সঙ্গে ইউএনসিটির কাজ সমন্বিতভাবে সম্পাদনের ব্যবস্থা করেন;
  • আবাসিক সমন্বয়কারী কার্যালয়কে কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান ও ব্যবস্থাপনা এবং সার্বিক কাজ দেখাশোনাও করেন।

 

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী

গোয়েন লুইস বাংলাদেশের জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী।

গোয়েন লুইসের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে ২০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস অ্যাজেন্সি (ইউএনআরডব্লিউএ) অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ছিলেন। সেখানে তিনি ৪ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই দল পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে ৮ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে জরুরি সেবা ও মানবিক ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। জেরুজালেমে নিয়োগ পাওয়ার আগে গোয়েন লুইস লেবাননে ইউএনআরডব্লিএ অ্যাফেয়ার্সের উপপরিচালক ছিলেন। এর আগে তিনি জাতিসংঘ শিশু তহবিলে (ইউনিসেফ) কাজ করেছেন। সেখানে তিনি ইউনিসেফের ইমার্জেন্সি বিভাগে গ্লোবাল ক্লাস্টার্স কোঅর্ডিনেশন সেকশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে ২০১২ সালে ইউনিসেফে যোগ দেন গোয়েন লুইস। এফএওতে তিনি মানবিক সহায়তা নীতি নিয়ে কাজ করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে এফএওর কার্যালয়ের কাজে সহযোগিতা করেছেন। গোয়েন লুইস জেনেভায় জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিট্যারিয়ান অ্যাফেয়ার্সেও (ওসিএইচএ) কাজ করেছেন। সেখানে তিনি জাতিসংঘ ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মধ্যে অংশীদারীত্ব গড়তে এবং মানবিক সহায়তা সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন। গোয়েন লুইস দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ওসিএইচএ এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের (আইসিআরসি) হয়েও কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি কসোভোয় জাতিসংঘ মিশনে এবং বিভিন্ন এনজিওর হয়ে তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান এবং আলবেনিয়ায় কাজ করেছেন।

ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী গোয়েন লুইস ক্যান্টারবারির ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড ইউরোপিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি স্যান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

গোয়েন লুইস বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী

গোয়েন লুইস

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী