সাম্প্রতিক
প্রেস রিলিজ
২০ জুন ২০২২
বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এর বাণী
আরো জানুন
প্রেস রিলিজ
০৫ জুন ২০২২
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এর বাণী
আরো জানুন
প্রেস রিলিজ
২৯ মে ২০২২
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এর বাণী
আরো জানুন
সাম্প্রতিক
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে বাংলাদেশ
দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় এবং সব জায়গার সব মানুষ যাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, তা নিশ্চিতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট একটি বৈশ্বিক আহ্বান। বাংলাদেশে নিম্নোক্ত অভীষ্টগুলো অর্জনে জাতিসংঘ কাজ করছে:
স্টোরি
২৯ নভেম্বর ২০২১
শস্য বৈচিত্র্য কৃষকদের জলবায়ু সহনশীলতা এবং আয় বৃদ্ধি করে
স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পটি (এসএসিপি) কৃষকদের সক্রিয় ও প্রতিযোগিতামূলক ভাবে বাজারে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও পরিষেবা দিচ্ছে। একইসাথে, শস্য বৈচিত্র্যকরণ, উচ্চ-মূল্যের ফসল উৎপাদন, তাজা ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকদের আয়, এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কাজ করছে প্রকল্পটি ।
জাতিসংঘের কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি ২০১৮ সাল থেকে উপকূলীয় ১১টি জেলায় বাস্তাবায়িত হচ্ছে এবং কারিগরি সহযোগিতা প্রদানে এফএও এই প্রকল্পে কাজ করছে।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে বাস করেন ৫৮ বছর বয়সী কৃষক মোহাম্মদ আবুল কালাম যিনি এই প্রকল্পে অংশগ্রহন করে উপকৃত হয়েছেন। উপকূলের এই জেলায় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, মাটির লবণাক্ততা এবং মাটি ক্ষয়ের ভয়াবহতা বেশি। অন্যদিকে ধান এখনও পর্যন্ত সেখানকার কৃষকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফসল। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাবার ভাত, আবার উৎপাদনের ক্ষেত্রেও প্রধান ফসল ধান। কিন্তু, ধান চাষিদের আয় এখনো অনিয়মিত এবং অপর্যাপ্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে ধান উৎপাদন অনেকাংশেই ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে এবং কৃষকদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে একইসাথে ফসল উৎপাদনে বৈচিত্র আনতে আগ্রহী কৃষকরা প্রায়ই প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান, তথ্য ও পরিষেবার সুবিধা পান না।
এই বাধা মোকাবেলা করতে এবং সব্জির আরো ভালো চাষাবাদের জন্য এসএসিপি প্রকল্প কালামের মতো ক্ষুদ্র কৃষকদের যথাযথ কৃষি উপকরণ, প্রযুক্তি ও কৌশলগত পরামর্শ প্রদান করে যাতে করে তারা বিনিয়োগের আশানুরূপ ফলাফল পান। বাজার গবেষণায় উচ্চ চাহিদা প্রমাণিত হওয়ায় প্রকল্প কালামকে লাউ, করলা, ফুলকপি এবং টমেটো চাষ করার পরামর্শ দেয়। সেই পরামর্শ অনুসরণ করে এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, তিনি এই ফসলের সর্বোত্তম বপন এবং কাটার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে পারেন, যার ফলে তার উৎপাদন এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে কৃষিতে সহনশীলতা আনতে অন্যতম একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে শস্য বৈচিত্র্য - অর্থাৎ কৃষি উৎপাদনে নতুন ফসল বা পদ্ধতির সংযোজন করা। একইসাথে প্রচলিত প্রধান শস্যের বাইরে নতুন ধরনের শস্য আবাদ করে কৃষকরা তাদের উপার্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তাও বাড়াতে পারেন। শস্য বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধাগুলো হচ্ছে অ-প্রধান খাদ্য শস্য চাষের জন্য অপর্যাপ্ত কৃষি সম্প্রসারণ সহযোগিতা, সীমিত উৎপাদন, এবং কৃষি উপকরণ বাজারের স্বল্পতা।
কালাম একজন উদ্যোগী কৃষক যিনি শষ্য বৈচিত্র ও নতুন কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করে তার জমিতে কাজ করেন। তার অভিজ্ঞতা তিনি অন্য কৃষকদের শোনাতে চান এবং প্রয়োজনে হাতে কলমেই শেখাতে চান। তিনি বিশ্বাস করে নতুন তথ্য ও দক্ষতার এই বিনিময় আর গ্রামের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
“আমি যে জমিতে কাজ করি তা আমার, এবং গ্রামটি আমার। আমার জমির মতোই অন্য জমিগুলোরও যত্ন হওয়া উচিত যাতে করে সে জমিগুলো বছরব্যাপী বিভিন্ন ফসল দিতে পারে। সমস্ত জমি, এমনকি অনুর্বর কিংবা প্রান্তিক এলাকা, সব জমিরই ভাল যত্ন নেওয়া উচিত। নতুন নতুন তথ্য ও উদ্ভাবনকে ব্যবহার করে আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে পারি এবং আরো ভালো জাতের ফসলের উৎপাদন করে সফল হতে পারি,” তিনি বলেন।
তার কৃষি কাজের সাফল্য দেখে, কালামকে তার উপজেলায় প্রধান কৃষক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। কালাম এখন চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুতকরন, বপন, সার প্রয়োগ এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতা উপজেলার অন্যান্য কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, “আমার গত বছর একটি ফুলকপি প্রদর্শনী প্লট ছিল, যা থেকে খুব ভাল ফসল এসেছিলো। আমি ৫৫০,০০০ টাকা মূল্যের পণ্য বিক্রি করে উল্লেখযোগ্য লাভ করেছি। এই বছর, আমি প্রকল্পের সহায়তায় একই জমিতে করলা আবাদ করছি।” তিনি আরো বলেন, “আমার উপজেলায় যেসব কৃষক তাদের ফসলের ধারা ও ধরণকে উন্নত করতে চান, সরকারি কৃষি অফিস তাদেরকে অনেক সহযোগিতা করছে। এখন দেখছি আমার গ্রামের প্রায় অর্ধেক কৃষকই সারা বছর বিভিন্ন সবজি চাষ করছে ।”
1 এর 2

স্টোরি
২৩ নভেম্বর ২০২১
জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো (ইউনাইটেড নেশনস সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক - ইউএনএসডিসিএফ ২০২২-২০২৬)
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইউএন কান্ট্রি টিম (ইউএনসিটি) ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২-২০২৬ উদ্বোধন করে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবিলা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অভীষ্টগুলো অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার অর্জন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে এ্জেন্ডা-২০৩০, এসডিজি এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ অর্জনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিতে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামোতে জাতিসংঘ উন্নয়ন সিস্টেমের সামগ্রিক উদ্যোগ প্রতিফলিত হয়েছে।
এটি বাংলাদেশে জাতিসংঘের উন্নয়ন সিস্টেমের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সহযোগিতার ধরনে পরিবর্তন এনেছে এবং এ দেশে সংস্থার সব যৌথ ও একক কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। কোভিড-১৯-এর প্রভাব এবং স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উত্তরণের কারণে উন্নয়ন অর্থায়নে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘ কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্কে বিভিন্ন উপায়ে উন্নয়ন কার্যকারিতার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে।
২০২২-২০২৬ সহযোগিতা কাঠামোতে পাঁচটি আন্তঃসম্পর্কযুক্ত, পারস্পরিকভাবে জোরারোপ করা ও বহুখাতভিত্তিক কৌশলগত অগ্রাধিকার (এসপি) চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে জাতিসংঘ উন্নয়ন সিস্টেম পরিবর্তনমূলক ও টেকসই উন্নয়নকে তরাণ্বিতকরণ প্রক্রিয়ায় বিশেষ সহযোগিতা দেবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে ভূমিকা রাখবে:
কৌশলগত অগ্রাধিকার ১: অন্তর্ভূক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন
কৌশলগত অগ্রাধিকার ২: সমতার ভিত্তিতে মানব উন্নয়ন ও কল্যাণ
কৌশলগত অগ্রাধিকার ৩: টেকসই, সহনশীল ও উপযোগী পরিবেশ
কৌশলগত অগ্রাধিকার ৪: রূপান্তরমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক সুশাসন
কৌশলগত অগ্রাধিকার ৫: লিঙ্গ সমতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল
এসব কৌশলগত অগ্রাধিকারের মাধ্যমে অন্তর্ভূক্তিমূলক, সমতার ভিত্তিতে, এবং টেকসই মানব, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়নে তথ্যপ্রমাণভিত্তিক উদ্যোগ তরাণ্বিতকরণে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে জাতিসংঘ সহযোগিতা দেবে। এই কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্কের মূলনীতিতে মানবাধিকার, জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, সহনশীলতা ও জবাবদিহি, যা জাতিসংঘের সব উন্নয়ন সিস্টেম সহযোগিতা কর্মসূচির পথনির্দেশক মূলনীতি—‘কেউই পেছনে পড়ে থাকবে না’ নিশ্চিত করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মুস্তফা কামাল এবং মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো।
ফাতিমা ইয়াসমিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেমওয়ার্ক, যা এলডিসি থেকে উত্তরণ থেকে শুরু করে মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা পর্যন্ত বড় পরিসরে জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে এবং এসডিজি অর্জনে আমাদের পথনির্দেশনা দেবে।’
কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্কের পাঁচটি কৌশলগত অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী তাঁর বক্তব্যে বক্ত্ব্য বলেন, ‘এসব কৌশলগত অগ্রাধিকার মানবাধিকারের সুরক্ষা ও অনুশীলনে সর্বজনীনতা, সমতা ও ন্যায্যতার মূলনীতি অনুসরণ করবে। বাংলাদেশ যেহেতু অসমতা হ্রাসের চেষ্টা করছে, কাজেই অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার নীতি ও কর্মসূচিগুলো হতে হবে অপেক্ষাকৃত আরও সুনির্দিষ্ট এবং বিশেষভাবে প্রান্তিক ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তাগুলো চিহ্নিত করতে হবে, যাদের অনেকেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চক্রাকারে দারিদ্র্যপীড়িত এবং সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিবেচনার বাইরে রয়েছে। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার আজ এমন একটি কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্কের উদ্বোধন করছে, যা ওই মানুষগুলো পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের চুক্তি হিসেবে কাজ করবে।’
উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সংস্থাগুলো, তহবিল ও কর্মসূচি স্বাধীনতার সময় থেকেই বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ও বিশ্বস্ত অংশীদার এবং উল্লেখযোগ্যভাবে সার্বিক উন্নয়ন অর্জনে তারা ভূমিকা রেখেছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘…দেশের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা ও কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব কাটাতে মধ্যবর্তী কৌশল বাস্তবায়নে, অতীত সাফল্যের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত অর্থনীতির মর্যাদা অর্জনে টেকসই পথরেখা তৈরিতে এই কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক দৃঢ়ভাবে সহযোগিতা করবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এই ফ্রেমওয়ার্ক সরকারকে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন—উভয় পদক্ষেপেই, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক সুশাসনে সহযোগিতা করবে এবং এটি জেন্ডারসমতা নিশ্চিত করবে ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নির্মূলে সরকারের হাত শক্তিশালী করবে।’
পুরো নথিটি পড়ুন এখানে:
United Nations Sustainable Development Cooperation Framework (UNSDCF) 2022-2026
1 এর 2

প্রেস রিলিজ
২০ জুন ২০২২
বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এর বাণী
বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আমরা যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালানো মানুষদের সাহসিকতা ও দৃঢ়তার কথা স্বরণ করছি এবং তাদের স্বাগত জানানো মানুষদের সহমর্মিতার কথা স্বীকার করছি।
আজ, বৈশ্বিক শরণার্থী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
ইউক্রেন -এ যুদ্ধ ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে বাস্তুচ্যূত করেছে।
বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালানো নারী, শিশু ও পুরুষসহ মোট বাস্তুচ্যূত মানুষের সংখ্যা ১০ কোটিতে পৌঁছেছে, যা আমাদের সময়ের এক নির্মম প্রেক্ষাপটের সাক্ষ্য দিচ্ছে।
এ বছরের বিশ্ব শরণার্থী দিবস আমাদের মানবজাতির সাধারণ একটি মৌলিক বিষয়ের কথা নিশ্চিত করছে: নিরাপত্তা চাওয়ার অধিকার সবার আছে- সে যে-ই হোক না কেন, যেখান থেকেই আসুক না কেন এবং যখনই তারা পালাতে বাধ্য হোক না কেন।
আন্তর্জাতিক আইনে পরিষ্কার বলা আছে:
আশ্রয় চাওয়ার অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার।
যেসব মানুষ সহিংসতা বা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালাচ্ছে, তাদের অবশ্যই নিরাপদে সীমান্ত অতিক্রম করতে দিতে হবে।
সীমান্তে তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না বা অন্যায্যভাবে তাদের শরণার্থী অবস্থার কথা অস্বীকার করা যাবে না কিংবা তাদের বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গপরিচয় কিংবা তাদের জন্মভূমির কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত থাকা যাবে না।
তাদের জীবন বা স্বাধীনতা ঝুঁকিতে থাকলে তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো যাবে না।
এবং সব মানুষের মতো তাদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলো প্রথম পদক্ষেপ।
ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার পর শরণার্থীদের সুযোগ প্রয়োজন।
ক্ষত মোছার, শেখার, কাজ করার এবং সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ প্রয়োজন তাদের।
তারা যদি চায়, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অথবা যেকোনো জায়গায় জীবন পুনর্গঠনের সুযোগ প্রয়োজন তাদের।
বিশ্বজুড়েই শরণার্থীরা তাদের আশ্রয়দাতা সমাজে নতুন জীবন, সমৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে।
শরণার্থীদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।
আসুন আজ আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, বিশ্বের সর্বত্র সব শরণার্থীর জন্য এবং নানা ধরনের চ্যালেঞ্জে থাকা তাদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোর জন্য আমরা আরও বেশি কিছু করব।
আসুন, আমরা সংহতি প্রকাশ করে এক কাতারে দাঁড়াই।
আসুন, আমরা আন্তর্জাতিক সুরক্ষা ব্যবস্থার অখন্ডতা রক্ষা করি।
এবং আসুন, আমরা যেন কখনোই আমাদের মানবতার মূল্যবোধ থেকে দৃষ্টি না ফেরাই, সে ব্যাপারে সচেষ্ট হই।
1 এর 5
প্রেস রিলিজ
০৫ জুন ২০২২
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এর বাণী
এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের পৃথিবী একটিই’, যা বাস্তবতার একটি সহজ কথা। এই গ্রহটা আমাদের একমাত্র আবাস। কাজেই এর বায়ুমণ্ডলের স্বাস্থ্য, পৃথিবীর বুকে যে প্রচুর জীবন ও তার বৈচিত্র্য, এই গ্রহের বাস্তুতন্ত্র এবং এর সীমিত সম্পদ রক্ষা করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তা করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। টেকসই নয় এমন জীবন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে আমরা আমাদের এই গ্রহটা থেকে অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষা করছি। পৃথিবীর প্রাকৃতিক ব্যবস্থা আমাদের চাহিদা মিটিয়ে যেতে সক্ষম নয়।
এটি কেবল পৃথিবীকে আহতই করছে না, আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সকল মানুষ এবং ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট্যের সবগুলোর জন্যই জরুরি। প্রকৃতি আমাদের খাবার, নিরাপদ পানি, ওষুধ নিশ্চিত করে, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে এবং চরম আবহাওয়া থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয়। কাজেই সুবিবেচনার মাধ্যমে প্রকৃতি ব্যবস্থাপনা এবং প্রকৃতির সেবাগুলো সবার, বিশেষত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী ও সমাজের, সমহারে প্রাপ্তি নিশ্চিত করা আমাদের জন্য জরুরি।
৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষয়িষ্ণু বাস্তুতন্ত্রের কারণে ক্ষতির শিকার। দুষণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটছে। ১০ লাখের বেশি উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, যার অনেকগুলো খুব বেশি হলে আর মাত্র কয়েক দশক টিকতে পারবে।
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যাদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব যেমন প্রবল তাপ, বন্যা ও ক্ষরায় মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ গুণ বেশি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘটনায় প্রতি বছর ২০ কোটিরও বেশি মানুষের বাস্তুচ্যূত হতে পারে।
পঞ্চাশ বছর আগে বিশ্বের নেতারা জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলনে একত্রিত হয়ে এই গ্রহটাকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত সফল হতে পারিনি। প্রতিদিনই যে সতর্ক ঘণ্টা বেজে চলেছে, তা আর আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।
সাম্প্রতিক স্টকহোম+৫০ পরিবেশ বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন যে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট্যের সবগুলোই একটি স্বাস্থ্যকর গ্রহের ওপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তন, দুষণ আর জীববৈচিত্র্য হারানোর ত্রিমাত্রিক সংকটের কারণে যে দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে, সেই দুর্যোগ এড়াতে আমাদের সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
সরকারগুলোর জরুরিভিত্তিতে নীতিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ও পরিবেশের সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যা টেকসই উন্নয়নকে তরাণ্বিত করবে। সব জায়গায় নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সবার জন্য কাঁচামাল সুলভ করা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো, ভর্তুকি বাড়ানো এবং বিনিয়োগ তিনগুণ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারকে নাটকীয়ভাবে তরাণ্বিত করতে আমি পাঁচটি সুপারিশ করেছি।
মানবতা ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই স্থিতিশীলতাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। একটি স্বাস্থ্যকর গ্রহ এই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা শিল্পের মেরুদণ্ড।
এবং ভোটার ও ভোক্তা হিসেবে আমাদের অবশ্যই যে নীতি আমরা সমর্থন করি, তার থেকে শুরু করে আমরা যে খাবার খাই, যে পরিবহন পছন্দ করি, যে কোম্পানিকে আমরা সমর্থন করি- সবকিছুতেই পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে হবে।
নারী ও মেয়েশিশুরা বিশেষত পরিবর্তনের শক্তি হতে পারে। তাদের অবশ্যই ক্ষমতায়ন করতে হবে এবং সব পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ও প্রচলিত জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং আমাদের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষায় এসব জ্ঞানের ব্যবহার করতে হবে।
ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে যে আমরা একসঙ্গে কাজ করলে এবং গ্রহটাকে সর্বাগ্রে রাখলে আমরা কী অর্জন করতে পারি। ১৯৮০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা যখন সতর্ক করলেন যে পৃথিবীর ওজন স্তরে মহাদেশের সমান ছিদ্র তৈরি হয়েছে যা প্রাণঘাতী হতে পারে, তখন প্রতিটা দেশ মন্ট্রিল প্রটোকল মেনে ওজন স্তর ক্ষয়কারী রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
১৯৯০-এর দশকে বাসেল সনদ উন্নয়নশীল দেশে বিষাক্ত বর্জ্য স্তুপীকৃত করা বেআইনি ঘোষণা করেছে। এবং গত বছর বহুজাতিক প্রচেষ্টায় লেড সমৃদ্ধ পেট্রোল উৎপাদন বন্ধ হয়েছে, যে পদক্ষেপ স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে এবং প্রতি বছর ১২ লাখের বেশি অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করবে।
২০৩০ সালের মধ্যে প্রকৃতির ক্ষতি প্রতিরোধে নতুন একটি বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে প্লাস্টিক দুষণ রোধে চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত বহুপাক্ষিক অংশগ্রহণে পরিবেশগত সংকট মোকাবিলার জন্য চলতি বছর এবং আগামী বছর বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য আরও কিছু সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জাতিসংঘ এসব পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, সামনে একটাই পথ- প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা, এর বিরুদ্ধে নয়। একসঙ্গে আমরা কেবল আমাদের এই গ্রহটাকেই রক্ষা করতে পারি না, এর উন্নতিও ঘটাতে পারি। কারণ, আমাদের একটিই মাত্র পৃথিবী রয়েছে।
1 এর 5
প্রেস রিলিজ
২৯ মে ২০২২
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এর বাণী
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী হিসেবে ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত কাজ করা ১০ লাখেরও বেশি নারী ও পুরুষকে আজ আমরা শ্রদ্ধা জানাই।
শান্তির লক্ষে কাজ করতে গিয়ে বীরত্বের সাথে জীবন উৎসর্গ করা প্রায় ৪ হাজার ২০০ জন নারী ও পুরুষকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
এবং আমরা বহু পুরোনো এক সত্যের মুখোমুখি: শান্তিকে কখনও অবহেলা করা যাবে না।
শান্তি হলো পুরস্কার।
জাতিসংঘের পতাকাতলে বর্তমানে কাজ করা ৮৭ হাজার বেসামরিক কর্মী, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, যাঁরা বিশ্বজুড়ে শান্তির মাহাত্ম অনুধাবনে সহযোগিতা করতে কাজ করে চলেছেন।
তাঁরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা তাঁদের কাজকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। মহামারির কারণে বিধিনিষেধ এই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করেছে। কিন্তু জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা শান্তির অংশীদার হিসেবে স্বাতন্ত্র্যের সাথে কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
এ বছর আমরা অংশীদারীত্বের শক্তির ওপর আলোকপাত করেছি।
আমরা জানি যে শান্তি তখনই অর্জিত হয়, যখন সরকার ও সমাজ আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য সমাধানে, অহিংস সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় এবং সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় সংঘবদ্ধ হয়।
বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা শান্তিপ্রতিষ্ঠায়, বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায়, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সদস্য রাষ্ট্র, নাগরিক সমাজ, মানবিক সহায়তা দানকারী, সংবাদমাধ্যম, যে সমাজকে তাঁরা সেবা দেন তাদের সঙ্গে এবং অন্য আরও অনেকের সঙ্গে কাজ করছেন।
সবার জন্য আরও শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনে, সমাজকে সংঘাত মুক্তকরণে তাঁদের এই নিবেদিতপ্রাণ কাজকে আমরা আজ এবং প্রতিদিন অভিবাদন জানাই।
আমরা তাঁদের কাছে চিরকাল ঋণী।
1 এর 5
প্রেস রিলিজ
১২ এপ্রিল ২০২২
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় তুতসিদের ওপর গণহত্যার ২৮তম বার্ষিকীর আন্তর্জাতিক প্রতিফলন দিবসে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এর বাণী
১৯৯৪ সালে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে নিহত ১০ লাখ মানুষকে আমরা একত্রে শ্রদ্ধা জানাই - নিহত ওই মানুষগুলোর সিংহভাগই তুতসি জনগোষ্ঠীর, তবে তাদের মধ্যে মধ্যপন্থী হুতু ও অন্যান্যরাও রয়েছে যারা গণহত্যার বিরোধিতা করেছিল।
আমরা তাদের স্মৃতির প্রতিসন্মান প্রদর্শন করছি ।
ওই গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রক্রিয়ায় আমরা সংহতি জানাই।
এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আমরা আমাদের ব্যর্থতার কথাও স্মরণ করছি।
গণহত্যাটি দুর্ঘটনাও ছিল না বা অনিবার্যও ছিল না।
এটি নির্বিচারে, পদ্ধতিগতভাবে - এবং প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত হয়েছে।
যারা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর ওপর নজর রাখে অথবা এ-সংক্রান্ত সংবাদ দেখেছেন, তাদের কেউই ওই সহিংসতার কথা অস্বীকার করতে পারবে না।
এরপরও মাত্র কিছু সংখ্যক মানুষ কথা বলেছিল- এবং তার চেয়েও কম মানুষ হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল।
আরও অনেক কিছু করা যেত - এবং করা উচিত ছিল।
ওই ঘটনার পর একটি প্রজন্ম কলঙ্কের দাগ নিয়ে টিকে আছে।
২৮ বছর আগের সেই রক্তপাত স্মরণের ক্ষণে আমাদের মেনে নিতে হবে যে আমাদের সামনে সবসময়ই বিকল্প পথ থাকে।
বিদ্বেষ ছেড়ে মানবতাকে বেছে নেওয়ার, নিষ্ঠুরতার পরিবর্তে সহমর্মিতাকে বেছে নেওয়ার, আত্মপ্রসাদের পরিবর্তে সাহসিকতাকে বেছে নেওয়ার এবং উন্মাদনার পরিবর্তে সমাধান খোঁজার পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ সবসময়ই থাকে আমাদের ।
সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বশীলতার মূলনীতিই হচ্ছে নৃশংস অপরাধ সংঘটনের সময় আমরা নীরব থাকব না।
এ্যাকশন ও অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে আমার আহ্বান হলো, আমরা যা কিছুই করি না কেন তার সবকিছুতেই মানবাধিকার সমুন্নত থাকতে হবে।
গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক আমার বিশেষ উপদেষ্টা গণহত্যার ঝুঁকি এবং অন্যান্য নৃশংস অপরাধ চিহ্নিত করতে বিশ্বজুড়ে সব ঘটনাবলীর ওপর নজর রাখছেন।
এবং আমি প্রতিরোধের এজেন্ডাকে আমাদের সব কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছি ।
আজ, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা যদিও তা নিখুঁত নয়, দেখিয়েছে যে অপরাধীরা আর ছাড় পাচ্ছে না।
রুয়ান্ডা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফৌজদারি ট্রাইব্যুনাল- যা ইতিহাসের প্রথম আদালত, যেখানে গণহত্যার অভিযোগে প্রথম কারও বিচার হয়েছে- এই প্রচেষ্টার কারণেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এবং এটি দেখিয়েছে টেকসই শান্তির জন্য ন্যয়বিচার কতটা অপরিহার্য।
রুয়ান্ডা আজ গভীরতম ক্ষত থেকে সেরে ওঠার এবং অন্ধকারতম খাদ থেকে জেগে উঠে শক্তিশালী সমাজ গঠনে মানব সক্ষমতার শক্তিশালী সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
অবর্ণনীয় জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হওয়া সত্ত্বেও আজ পার্লামেন্টের আসনের ৬০ শতাংশ নারীদের দখলে।
এবং রুয়ান্ডা এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সেনা প্রেরণকারী চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। যে ব্যথা তারা নিজেরা সহ্য করেছে, তা যেন অন্যদের ক্ষেত্রে না ঘটে এ কারণেই ঝুঁকি জেনেও নিজেদের সেনাদের পাঠাচ্ছে রুয়ান্ডা ।
তুতসিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা যে প্রশ্ন তুলেছে, তা মানবসভ্যতার সবক্ষেত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে- নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের কার্যকারিতা, আন্তর্জাতিক অপরাধে অপরাধীকে ছাড় দেওয়ার প্রবণতার সমাপ্তি, সহিংসতার উৎস চিহ্নিতকরণ এবং শিষ্টাচারের ভঙ্গুরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আমাদের সামনে রয়েছে বড় পরীক্ষা ।
আজ, ইউক্রেনে আগুন জ্বলছে, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এর বাইরে নতুন-পুরোনো সংঘাত ক্ষত সৃষ্টি করছে।
নিরাপত্তা পরিষদ এমন পরিবেশ সৃষ্টিতে একমত, যেখানে ক্রীড়নক রাষ্ট্র কিংবা ব্যক্তির ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, অসমতা ও দারিদ্র্য বাড়ছে- এবং এগুলোর সবই অসন্তোষ, উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করছে।
এরমধ্যে, আমরা অনলাইন ও অফলাইনে বাড়তে দেখছি , ঘৃণামূলক বক্তব্য, অমানবিক ভূল তথ্য, বর্ণবাদী বক্তব্য এবং গণহত্যার অস্বীকৃতিসহ বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য ।
আজ আমাদের অবশ্যই অসহনশীলতা, যুক্তিহীনতা ও গোঁড়ামি প্রতিটা সমাজের জন্য কতটা বিপজ্জনক, তা স্বীকার করে নিতে হবে।
আসুন, অনুতাপের সঙ্গে অতীতের দিকে তাকানোর পাশাপাশি সংকল্প নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে ও তাকাই।
আসুন আমরা সতর্ক থাকার এবং কখনো ভুলে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি গ্রহন করি।
আসুন আমরা রুয়ান্ডার সেইসব মানুষকে অর্থপূর্ণভাবে স্মরণ করি, যারা সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও সহনশীল ভবিষ্যত এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
ধন্যবাদ।
1 এর 5
প্রেস রিলিজ
০৩ এপ্রিল ২০২২
পবিত্র রমজান উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এর বাণী
পবিত্র রমজান মাস শুরুর প্রাক্কালে আমি বিশে^র লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
এই মাস সহানুভুতি ও অনুকম্পার মাস...গভীর চিন্তা ও শিক্ষা নেওয়ার মাস...একে অপরের কাছে আসার এবং পারস্পরিক সহানুভুতির একটি সুযোগ এই মাস।
শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে আমি একটি অনুশীলন শুরু করেছিলাম, যা আমি গর্বের সঙ্গে মহাসচিব হিসেবেও পালন করে যাচ্ছি।
প্রতি রমজানে আমি মুসলিম দেশগুলো সফর করে সম্মানিত বোধ করেছি, সংহতি প্রকাশ করে রোজা রেখেছি এবং সবার সঙ্গে ইফতার করেছি।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে কোভিড-১৯ মহামারি এই অনুশীলন অসম্ভব করে তুলেছিল। তবে এ বছর আবার এই অনুশীলন শুরু করতে পারব বলে আমি খুশি।
বিয়োগান্তক ও দুর্বিষহ এই সময়ে আমার চিন্তা ও হৃদয় পড়ে আছে সংঘাত, বাস্তুচ্যূতি ও ভীতির মধ্যে থাকা মানুষগুলোর মাঝে।
পবিত্র কোরআন শরিফ আমাদের শিখিয়েছে যে সৃষ্টিকর্তা জাতি ও গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছেন যেন আমরাও একে অপরকে জানতে পারি।
এই পবিত্র মাসে এবং প্রতিটা দিন, আসুন আমরা সব নারী-পুরুষের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সমৃদ্ধির জন্য হাতে হাত রেখে কাজের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা নিই।
আসুন আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখি এবং একসঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠন করি।
রমজানুল করিম।
1 এর 5
সাম্প্রতিক রিসোর্স
1 / 8
রিসোর্স
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
রিসোর্স
০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
1 / 8