সমুদ্রপথে অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধে ইউএনওডিসির দুই সপ্তাহব্যাপী ইন্টারেক্টিভ প্রশিক্ষণ
২ নভেম্বর ২০২৩ – ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
সমুদ্রপথে অভিবাসীদের চোরাচালান একটি ব্যতিক্রমী এবং বিপজ্জনক অপরাধ, যেখানে জীবনের ঝুঁকির দায়ভার বহন করে অভিবাসীরা অথচ এই অবস্থা থেকে আর্থিক লাভ করে চোরাচালানকারীরা । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নিয়মিত অভিবাসনের সীমিত সুযোগ সহ অনেকগুলো কারণের সংমিশ্রণে, অপরাধী গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পেরেছে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ অন্যান্য দূরের দেশেও চোরাচালান করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগর পেরিয়ে সমুদ্রপথে অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুদের পাচারের ক্রমবর্ধমান রিপোর্টগুলো ইঙ্গিত দেয় যে একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়া নেয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সমুদ্রপথে অভিবাসীদের চোরাচালান মোকাবেলায় সহায়তার অংশ হিসাবে, ইউএনওডিসির রিজোনাল অফিস ফর সাউথ এশিয়া (ইউএনওডিসি রোসা) এর গ্লোবাল অ্যাকশন এগেইন্সট ট্রাফিকিং ইন পার্সন্স অ্যান্ড দ্য স্মাগলিং অফ মাইগ্রেন্টস-বাংলাদেশ (গ্লোঅ্যাক্ট-বাংলাদেশ) প্রকল্প এবং রিজোনাল অফিস ফর দ্যা সাউথইস্ট এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক (রোসিআপ) যৌথভাবে "সাগরপথে অভিবাসী চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যক্রম" শীর্ষক দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ কোর্সে আয়োজন করেছে। কর্মশালাটি ২৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণ কোর্সটি ১২টি মডিউল নিয়ে গঠিত এবং মডিউলগুলো একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত। মডিউলগুলো অভিবাসী চোরাচালান এবং সামুদ্রিক আইনের সাথে প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক আইন কাঠামো; অভিবাসী চোরাচালান রোধে মানবাধিকার-ভিত্তিক ও লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল পদ্ধতি; তথ্য বা ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ; সমুদ্র অভিবাসী চোরাচালানের মামলা তদন্ত কৌশল; অভিবাসী চোরাচালান প্রোটোকলের অধীন ইন্টারসেপ্সনের ক্ষেত্র; সমুদ্রে অনুসন্ধান এবং উদ্ধার; স্ক্রীনিং, সুরক্ষা এবং সহায়তা; অপরাধ স্থান এবং বস্তুগত বা ফিজিকাল প্রমাণ পরীক্ষা; সাক্ষাৎকার; আর্থিক তদন্ত; প্রসিকিউশন, ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।
কর্মশালায় ঈশিতা রনি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব এবং গ্লোঅ্যাক্ট-বাংলাদেশের উপ-প্রকল্প পরিচালক, অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি জানান যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিবাসী চোরাচালান সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের ধারণা পরিবর্তন দেখতে পান। তিনি সমুদ্রপথে অভিবাসী চোরাচালানের পিছনে অপরাধমূলক নেটওয়ার্কগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যাহত, তদন্ত ও বিচার করতে, এবং চোরাচালানকৃত অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশে আন্তঃসংস্থা সমন্বয় ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত কর্মশালা ছিল প্রথম। কর্মশালাটি বঙ্গোপসাগরে অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও ভাল উদাহরণগুলোকে যৌথভাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি চোরাচালানকৃত অভিবাসীদের সুরক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তঃসংস্থা সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দেয়। সমুদ্রে অভিবাসী চোরাচালান রোধে আন্তর্জাতিক আইনের আবশ্যকতার উপর সচেতনতা বৃদ্ধিসহ কর্মশালাটি অংশগ্রহণকারীদের অভিবাসীদের অধিকার সমুন্নত রেখে অভিবাসী চোরাচালান তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
প্রশিক্ষণটি বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ থেকে উপকৃত হয়েছে। দুই সপ্তাহ জুড়ে, অংশগ্রহণকারীদের মানব পাচার এবং অভিবাসী চোরাচালান সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি ইউএনওডিসি রোসিআপ-এর টেররিজম অর্থায়ন প্রতিরোধ/মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ইউনিট, নিউজিল্যান্ড পুলিশের লিয়াজোঁ অফিসার, রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) প্রজেক্ট ম্যানেজার, সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক আইন ও নীতি বিষয়ক প্রোগ্রামের গবেষক এবং ইউএনএইচসিআর আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রটেকশন বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। কর্মশালাটি প্রেজেন্টেশন, গ্রুপ অনুশীলন, কেস স্টাডি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ভেসেল সার্চ টুলের মাধ্যমে সিমুলেশন এবং অংশগ্রহণকারীদের উপস্থাপনার সাহায্যে কার্যকরভাবে আয়োজন করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, বাংলাদেশ নদী পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে মনোনীত ২০ জন বাংলাদেশি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।
ইউএনওডিসি গ্লোঅ্যাক্ট-বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও জানতে, ভিজিট করুন -
https://www.unodc.org/unodc/en/human-trafficking/glo-act3/index.html