ক্যাপশন: As the first responders to fires in the Cox’s Bazar camps, Rohingya volunteer firefighters, rigorously trained by humanitarian partners, show tremendous courage and heroism.
ধোঁয়ার গন্ধ টের পাচ্ছিলাম রোহিঙ্গা শিবিরের সরু রাস্তা ধরে যেতে যেতে। এ বছরের শুরুতে এক বিশাল আগুন পুড়িয়ে দিয়েছে প্রায় ৯০০ ঘর। আরেকটু এগুতেই বোঝা যায় কোথায় আগুন লেগেছিল। হঠাৎ এক জায়গায় দেখা যায় কোন গাছ নেই, মাটি পুড়ে কালো হয়ে আছে। কয়েকদিন আগেও সবুজে ঢাকা পাহাড়গুলোতে এখন আছে শুধু পোড়া গাছ।
সব হারানো হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ৭ জানুয়ারি রাতে এখানে আবারও নিঃস্ব হয়েছে। তেরপল আর বাঁশের তৈরি ঘরগুলোতে গত কয়েক বছরের শরণার্থী জীবনে সংগ্রহ করা সামান্য কিছু জিনিস-পত্রই ছিল। সেগুলোও পুড়ে গেল, যখন আগুন থেকে বাঁচতে সবাই মরিয়া হয়ে পালাচ্ছিল। তবে মানুষগুলো ফিরেও এসেছে দ্রুত। অস্থায়ী ঝুপড়িতে বসে তাদের অধীর অপেক্ষা আগের জায়গায় নতুন করে ঘর তোলার জন্য। মানবিক সংস্থাগুলোর তৈরি ইমার্জেন্সি শেল্টারগুলো হয়তো উষ্ণ আর শক্ত, কিন্তু তাঁদের অনেকেই চান পরিচিত জায়গায় থাকতে। একজন শরণার্থী যেমন বলছিলেন, “এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে যেতে আমরা ক্লান্ত। আপাতত এখানেই আমাদের ঘর”।
ক্যাপশন: Despite offers of emergency safe shelters, some families set up makeshift tents on the ashes of their shelter plots, wanting to stay close to ‘home.’
এই প্রান্তরে এখন শোনা যায় নির্মাণের শব্দ আর নতুন ঘর তুলতে পুরোদমে ব্যস্ত শরণার্থীদের কন্ঠ। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এক এক দুর্যোগের পর নতুন করে আবার সব কিছু দাঁড় করায়, আর পরিস্কার প্রমাণ দেয় তাদের দৃঢ় প্রত্যয়ের।
আমাদের গর্ব হয় প্রত্যেকটা দুর্যোগে শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ শরণার্থীদের স্থির সংকল্প আর দক্ষতা দেখে। এবারের আগুনে একজনও মারা যায় নি, বা গুরুতর আহত হয় নি। রাত ১টার সামান্য একটু পর যখন সাইরেন বেজেছে, শত শত স্বেচ্ছাসেবক এগিয়ে এসেছে। তারা শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীসহ প্রায় ৫,০০০ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে, আর এর সাথে আগুনও নিভিয়েছে।
অন্য ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকরাও এসে যোগ দেয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া লেলিহান শিখা নেভাতে। তারা খুব ভালো করেই জানতো শীতের শুস্ক মৌসুমের জোরালো বাতাসে আগুন কত দ্রুত ছড়াতে পারে। সময় মত নেভাতে না পারলে এর পর তাদের ঘরেও আগুন লাগতে পারতো। দমকল বাহিনীর প্রতিও আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ; তারা ঘটনাস্থলে এসেছিলেন, আর প্রায় তিন ঘন্টার সম্মিলিত চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
রোহিঙ্গাদের সাহসিকতা ও তৎপরতায় আমি বিস্মিত। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকেরা বয়স্ক প্রতিবেশীদের, যারা হাঁটতে পারে না, তাদের কাঁধে করে সরিয়ে নিয়ে গেছেন। আরেক দল “ফায়ার-ব্রেক” তৈরি করছিল কিছু শেল্টার ভেঙে দেয়ার মাধ্যমে, যেন আগুনের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা যায়। আগুন মোকাবেলায় তাদের প্রত্যকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তারা সবাই একটা ব্যাপারে একমত যে ক্যাম্পে ঢোকার রাস্তা ভালো থাকলে অনেক মূল্যবান সময় বাঁচানো যেত।
ক্যাপশন: The new site plan for the fire-affected zone includes fire corridors between blocks of shelters and standardized shelter sizes.
রোহিঙ্গাদের আগমনের পর ২০১৭ সালের শেষের দিকে যখন এই পাহাড়ি এলাকায় শরণার্থী শিবির গড়ে ওঠে, সবুজে ঢাকা এই জায়গা রুপ নেয় জনবহুল লোকালয়ে। স্যান ফ্রান্সিস্কো বা আমস্টারডাম শহরের জনসংখ্যার সমান সংখ্যক মানুষের বাসস্থান নির্মাণে বাংলাদেশী ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার কর্মীরা একসাথে কাজ করেছিল কয়েক মাস ধরে।
পরবর্তী বছরগুলোতে যখন ক্যাম্প জুড়ে রাস্তাগুলো তৈরি হলো, পাহাড়ের ধারে ততদিনে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের শেল্টার। এই এলাকাকে বড় রাস্তার সাথে যুক্ত করতে হলে সেই শেল্টারগুলো ভাঙতে হত, আর মানুষগুলোকে আবার অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে হত। তাই শেল্টারগুলো আর ভাঙা হয় নি, সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয় নি। সেজন্যই ৭ জানুয়ারির রাতের আগুনের স্পটে যাওয়ার উপায় ছিল সরু রাস্তা আর সিঁড়ি। বাঁশ দিয়ে মজবুত করা সরু রাস্তায় দমকলের গাড়ি সহজে যেতে পারছিল না।
২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেক উন্নতি হয়েছেঃ স্বাস্থ্যবিধি, শিক্ষা ও চিকিৎসাকেন্দ্র জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করেছে। বনায়নের জোরালো প্রচেষ্টায় বাদামী এলাকাটি সবুজে ভরিয়ে তোলা হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে শরণার্থীরা পেয়েছে নতুন কাঠামো ও কিছু সামগ্রী। যদিও প্রায় সবাই আমাদের বলে নিরাপদ হলে তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়; তবুও তারা যারপরনাই চেষ্টা করছে দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে শরণার্থী জীবনে স্বাভাবিক থাকতে।
বাংলাদেশী মানবিক সংস্থা, জাতিসংঘের সংস্থা ও এনজিও’র সাথে মিলে ইউএনএইচসিআর ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পটি পুনঃনির্মাণ করছে, আর লক্ষ্য রাখছে কিভাবে আরেকটু ভালোভাবে এটিকে গড়ে তোলা যায়। সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পিত ক্যাম্পে দুর্যোগের ঝুঁকি কম থাকে। যদিও রোহিঙ্গাদের ঘর নির্মাণে এখনও অস্থায়ী উপকরণই ব্যবহৃত হচ্ছে; তারপরও আমরা সাইট প্ল্যানিং, রাস্তার প্রশস্ততা, পানি ও পয়ঃনিস্কাশন কেন্দ্র, স্ট্রিট ল্যাম্প এবং শেল্টারের সার্বিক নকশায় গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি করছি।
ক্যাম্পের বিধ্বংসী আগুন আমাদের আবারও তীব্রভাবে মনে করিয়ে দেয়, রোহিঙ্গাদের মনোবল যত দৃঢ়ই হোক না কেন, শরণার্থী শিবিরে দুর্যোগ আঘাত হানলে তা খুবই করুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। সেজন্য ঘূর্ণিঝড়, ভারী মৌসুমী বৃষ্টি, আগুন বা ভূমিধ্বসে টিকে থাকার মত মজবুত বাসস্থান ও ভালো সংযোগ সড়ক নির্মাণে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করা খুবই জরুরী। শত শত ঘর, রাস্তা আর বিভিন্ন স্থাপনা পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে তাদের জীবন নতুন করে শুরু হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নতুন ঘরে থাকতে পারবে। যেখানে আমরা আশা করি তারা আরেকটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে এটা জেনে যে বিপদে তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছুবে আরেকটু দ্রুত।
ক্যাপশন: Over 400 new shelters have been completed by skilled refugee labour, with the support of NGO partners, Camp 5 authorities, and UNHCR.