প্রেস রিলিজ

শিশুদের রক্তে উদ্বেগজনক হারে সিসার উপস্থিতি: সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কৌশল প্রণয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইউনিসেফের আহ্বান

০৭ নভেম্বর ২০২৪

ক্যাপশন: UNICEF Joint Press Releases
ফটো: © UNICEF

সিসা দূষণে ক্ষতিগ্রস্থ শিশুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। দেশে সাড়ে ৩ কোটির বেশি শিশুর রক্তে 
সিসা রয়েছে বিপজ্জনক মাত্রায়।

ঢাকা ৫ নভেম্বর ২০২৪ – শিশুদের সিসা দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ’ উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় (এমওইএফসিসি) ইউনিসেফের সঙ্গে যৌথভাবে আজ একটি জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করে। সিসাসহ শিশুদের ক্ষতিসাধন করে এমন ভারী ধাতুর উৎস সম্পর্কে ধারণা বাড়ানো এবং সিসার দূষণ কমানোর লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীজনদের সম্পৃক্ত করতে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। 

কর্মশালায় পূর্ববর্তী গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ও ফলাফল তুলে ধরা হয়, যেখানে শিশুদের রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রায় সিসার উপস্থিতি, সিসার উৎস ও দূষণের উপায়গুলো দেখানো হয়। সিসা দূষণের বাস্তবতা বুঝতে হলে সারা দেশে এর উপস্থিতি (রক্তে সিসার মাত্রা) সম্পর্কিত উপাত্ত জানা জরুরী। এসব বিষয় জানা থাকলে বাংলাদেশ সরকার, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর একসঙ্গে সিসা দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সিসা ও ভারী ধাতুর দূষণ একটি নীরব ঘাতক, যা মোকাবিলায় প্রয়োজন জরুরী ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। সবার জন্য একটি সিসামুক্ত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে সিসা দূষণ রোধ করতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি সব অংশীজনদের এই কর্মশালায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। বাংলাদেশে বিষাক্ত ধাতুর সংস্পর্শে আসার প্রধান উৎসগুলো চিহ্নিত করতে আমরা একত্রে একটি বিস্তৃত ও কার্যকরী কর্ম পরিকল্পনা গড়ে তুলতে পারব।”

সিসা দূষণ একটি জরুরি পরিবেশগত স্বাস্থ্য সংকট, বিশেষ করে বাংলাদেশে। দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন পরিবেশে ভারী ধাতুর দূষণ বাড়িয়েছে, যার ফলে শিশুদের বাতাস, পানি, মাটি, খাবার, খেলনা, রঙ ও রান্নার সামগ্রীর মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটির নারী ও শিশুদের মধ্যে সিসা দূষণের প্রভাব ব্যাপক; এটি ছোট শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর, যা স্থায়ীভাবে তাদের স্নায়বিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণ হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, “সাধারনত ভারী ধাতু বিশেষ করে সিসা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ওপর বেশি গুরুতর প্রভাব ফেলে, এই ক্ষতি চিরস্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। দুর্ভাগ্যবশত, শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিকাশের সময়সীমা কমে যায় এবং প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ (কার্ডিওভাসকুলার) দেখা দেয় আর গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে তাদের অনাগত শিশুরা হয় ক্ষতিগ্রস্ত। তবে সুস্পষ্ট আইন এবং বিশেষ করে বেসরকারি খাতের  সঠিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ দ্বারা এই দূষণ প্রতিরোধযোগ্য। আর এভাবে, এই দূষণের ফলে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের যে অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তি হয়ে থাকে, পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যে বাড়তি খরচ হয়ে থাকে, সেটাও অনেকাংশে  কমিয়ে ফেলা সম্ভব। ইউনিসেফ অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে মিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে প্রতিটি শিশু সিসা ও বিষাক্ত ধাতুমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে, খেলতে ও শিখতে পারবে।” 

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি)-এর সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ খুলনা, টাঙ্গাইল, পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় ৯৮০ এবং ঢাকায় ৫০০ শিশুকে পরীক্ষা করে সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি শনাক্ত করে। এসব নমুনার মধ্যে চার জেলায় ৪০ শতাংশ এবং ঢাকায় ৮০ শতাংশ নমুনায় প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা পাওয়া যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রার চেয়ে বেশি। অবশ্য শিশুদের রক্তে কোনো মাত্রায় সিসার উপস্থিতিই নিরাপদ নয়। তাই এই অংশীদারিত্বের (পার্টনারশিপ)  মাধ্যমে সিসা শনাক্তকরণ ও সিসার সংশপর্শে আসার উৎস ও উপায়গুলো রোধ করার উপর বিশেষ জোর দেয়া হবে। 

২০২৪ সালের জুন মাসে, ইউএসএআইডি এর আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফ ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস): রাউন্ড ৭ (২০২৪-২০২৫)’ শুরুর কথা আনুষ্ঠানিকভাবেঘোষণা করে, যেখানে প্রথমবারের মতো রক্তে সিসা ও অন্যান্য বিষাক্ত ধাতুর মাত্রা সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহের মডেল অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বড় পরিসরে এই নির্ভরযোগ্য ও জাতীয় পর্যায়ের উপাত্ত, নীতিমালা সংস্কারে জোরালো তথ্যপ্রমাণ যোগান দেবে। বাংলাদেশে সিসামুক্ত ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী আইন ও পদক্ষেপ গ্রহণেও সহায়ক হবে, যেখানে সব পণ্য হবে সিসামুক্ত এবং থাকবে নিরাপদ শিল্পায়ন ব্যবস্থা।

শিশুদের সিসার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচানোর ও সিসামুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্য নিয়ে চালু হওয়া বৈশ্বিক উদ্যোগ ‘পার্টনারশিপ ফর এ লেড-ফ্রি ফিউচার’ (পিএলএফ)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে সিসা দূষণ রোধের মাধ্যমে শিশুদের ওপর সিসার বিষক্রিয়া নির্মূল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পিএলএফ এর একজন অংশীদার হিসেবে, ইউনিসেফের সহায়তায়, বাংলাদেশ সিসার সংস্পর্শে আসার উৎসসমূহ চিহ্নিত ও সিসা দূষণ প্রতিরোধ করতে প্রতিশ্রুতির কথা জানান দিয়েছে; পাশাপাশি সুশীল সমাজের সংস্থা ও বেসরকারি খাতের দক্ষতা, সম্পদ ও সহযোগিতা কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে।

ইউনিসেফ, সিসা দূষণ মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে এবং ভারী ধাতুর উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাতের পরীক্ষাগারের সক্ষমতা জোরদার করতে একটি বহুখাতীয় কর্মপরিকল্পনার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রতি কর্মশালায় আহ্বান জানায়। ইউনিসেফ একইসঙ্গে সিসা দূষণের কারণগুলো চিহ্নিতকরণে সহায়তা করতে, এর উৎস ও সংস্পর্শে আসার পথগুলো শনাক্তকরনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা দেবার ক্ষেত্রে অংশীদারদের দক্ষতা কাজে লাগানোরও আহ্বান জানায়।

###

 

ছবি ডাউনলোড করুন এখান থেকে। 

 

ইউনিসেফ সম্পর্কিত 
বিশ্বের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বের কঠিনতম কিছু স্থানে কাজ করে ইউনিসেফ। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা কাজ করি। ইউনিসেফ এবং শিশুদের জন্য এর কাজ সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন:www.unicef.org/bangladesh/

 

ইউনিসেফকে অনুসরণ করুন TwitterFacebookInstagram ও YouTube–এ। 

 

আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:

ফারিয়া সেলিম, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, fselim@unicef.org

 

এই উদ্যোগে জাতিসংঘের যে সকল সংস্থা যুক্ত

জাতিসংঘ
জাতিসংঘ- বিবরণ
ইউনিসেফ
জাতিসংঘ শিশু-বিষয়ক সংস্থা

অন্য যে সংস্থা এই উদ্যোগটিতে যুক্ত

AOPAUTAOTPOTROB
Academy of Public Administration under the aegis of the President of the Republic of Belarus

এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা যে টেকসই লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিচ্ছি