প্রতিবন্ধকতার বাধা পেড়িয়ে জাহিদুলের সাফল্যের কাহিনী
০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
৪ ডিসেম্বর ২০২৩ বাংলাদেশে জাতিসংঘের কর্ম ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী কর্মীদের অন্তর্ভুক্তির একটি সুন্দর উদাহরণ
প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন করা হয়। দিবসটি প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের জীবন ও কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভূক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে। দিবসটির লক্ষ্য হলো প্রতিবন্ধকতা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ধারণা দেওয়া এবং প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের মর্যাদা, অধিকার ও ভালো থাকার জন্য যাবতীয় সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়াকে উৎসাহিত করা।
প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের সব ধরনের মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি আরও জোরদার হয়েছে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অধিকার সনদ (সিআরপিডি) এবং টেকসই উন্নয়নের অ্যাজেন্ডা-২০৩০ এর মাধ্যমে। অধিকারভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষগুলোর সম্মানজনক জীবন ও জীবিকার পক্ষে প্রচারণা চালাতে দিবসটি আমাদের সুযোগ করে দেয়।
মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ২০২২ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী সমন্বয়ক পদে ইউএনএফপিএতে যোগদান করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে তাঁকে পূর্ণকালীন স্থানীয় কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা তাঁর কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে বসেছিলাম এবং তাঁর জীবন ও কর্মজীবন নিয়ে কথা বলেছি।
অলাভজনক এই ক্ষেত্রে আসা এবং জাতিসংঘ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট হতে আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমার প্রতিবন্ধকতা। দুই বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়েছিলাম। তারপর আমার জীবন হুইলচেয়ারবন্দী হয়ে পড়েছে। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। সমাজে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। এমনটা যে শুধু আমার ক্ষেত্রেই ঘটেছে, তা কিন্তু নয়। আর এ কারণেই প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের অধিকারের পক্ষে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।
সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের জন্যও সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৩ সালে আমি সক্রিয়ভাবে প্রচারণায় নেমে পড়ি। তাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় এনজিওগুলো। এর বাইরে আমি অবকাঠামোগত প্রবেশাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অন্তর্ভূক্তিমূলক পদক্ষেপ এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের পদক্ষেপে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতেও আমি কাজ শুরু করি। এসব স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতাই আমার অলাভজনক খাতে আসার পথ তৈরি করেছে।
জাতিসংঘে কাজ করার স্বপ্ন আমার মনে দাঁনা বাঁধে তখনই, যখন বুঝলাম এই বৈশ্বিক সংস্থার বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানোর সক্ষমতা রয়েছে। আমি জাতিসংঘকে মনে করি একটি শক্তিশালী বল হিসেবে, যার প্রভাব বিস্তারি উদ্যোগ বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে। ব্যক্তিগত প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড কেবল এনজিওতে আমাক কাজ করার পথই সুগম করেনি, বরং আরও অন্তর্ভূক্তিমূলক ও ন্যায্য বিশ্ব গড়তে জাতিসংঘের লক্ষ্যে অবদান রাখার আকাঙ্ক্ষাও জোরালো করেছে।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষেরা সাধারণত কী অসমতা ও বৈষম্যের শিকার হয়? এগুলো কী লিঙ্গপরিচয় ও প্রতিবন্ধকতার ধরনের ওপর একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়?
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষেরা নানা ধরনের অসমতা ও বৈষম্যের শিকার হয়। প্রতিবন্ধকতার ধরণ ও লিঙ্গপরিচয়ের ভিত্তিতে একেকজন একেকরকম বৈষম্যের শিকার হয়। যাদের চলাফেরায় সমস্যা, তারা নানা জায়গায় যেতে বাধার মুখে পড়ে, অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে না। যাদের ইন্দ্রিয়জনিত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তাদের যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। ব্রেইল পদ্ধতি সুলভ না হওয়ায় ইশারা ভাষা শেখা তাদের জন্য সহজ নয়। এতে সীমাবদ্ধতা আরও বেড়ে যায়।
লিঙ্গ ভেদে বৈষম্যের ধরণ ও মাত্রাও পাল্টে যায়। যেমন নারীদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধকিতার শিকার, তারা অনেক সময়ই জটিল বৈষম্যের শিকার হয়। এমনকি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতারও শিকার হয় তাঁরা। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও সুবিধাবঞ্চিত হয়। লিঙ্গপরিচয় নিয়ে প্রচলিত মানসিকতা এসব চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দেয়, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সুযোগ আরও সীমিত করে।
এরপর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এখানেও প্রতিবন্ধকতার ধরণ ও লিঙ্গপরিচয় ভেদে বৈষম্যের ধরণ ভিন্ন হয়। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত ধারণা জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এতে মানসিকভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষেরা আরও পিছিয়ে পড়ে।
মোদ্দা কথা হলো, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষেরা নানামাত্রিক জটিল বৈষম্য ও চ্যালেঞ্জের শিকার হয়। সেই বৈষম্য ও চ্যালেঞ্জ আরও জটিল হয় প্রতিবন্ধকতার ধরণ ও লিঙ্গপরিচয়ের কারণে। এগুলো চিহ্নিত করতে প্রয়োজন সামগ্রিক ও আন্তঃখাতভিত্তিক পদক্ষেপ।
শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আমার জন্য সবচেয়ে বাধা ছিল যাতায়াত ও প্রবেশের চ্যালেঞ্জ। হুইলচেয়ার ব্যবহার করি আমি। বাংলাদেশে যতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমি পড়েছি, তার সবগুলোতেই আমাকে ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জর মুখে পড়তে হয়েছে। একটি কলেজ তো আমাকে ভর্তি নেবে না বলে জানিয়েই দিয়েছিল। কারণ, তাদের ওখানে হুইলচেয়ারে প্রবেশের সুযোগ ছিল না। যদিও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সময় এমন বাধার মুখে কমই পড়তে হয়েছে। ফলে আমার শিক্ষাগ্রহণের পথটা সহজ হয়ে উঠেছিল।
আর কাজের ক্ষেত্রে যদি বলতে হয়, অতীতের প্রতিষ্ঠান বলুন কিংবা বর্তমান- সব ক্ষেত্রেই আমাকে প্রবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। বর্তমান কর্মক্ষেত্র, বিশেষত জাতিসংঘ ভবনে এখনো হুইলচেয়ারে প্রবেশের পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা গড়ে ওঠেনি। প্রতিদিনই হুইলচেয়ারে প্রবেশ কিংবা বের হওয়ার সময় আমাকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়।
ইউএনএফপিএ, ইউএনভি ও ইউএন বাংলাদেশে আপনার ভূমিকা কী, বিস্তারিত বলবেন?
ইউএনএফপিএতে জাতীয় প্রতিবন্ধী সমন্বয়ক হিসেবে আমি প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্তির কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে চলেছি। পাশাপাশি সংস্থার মানবিক সহায়তায় আরও বেশি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে তা জোরদার করছি। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ইউএনএফপিএর প্রতিবন্ধী অন্তর্ভূক্তিকরণ উদ্যোগের জন্য একটি মানসম্পন্ন পরিচালন প্রক্রিয়া প্রক্রিয়া প্রণয়ন। আমি সক্রিয়ভাবে প্রতিবন্ধী অন্তর্ভূক্তিকরণ এবং ইউএনএফপিএতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রকল্প প্রণয়ন, বিশেষত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মডিউল তৈরিতে জাতিসংঘের সহেযাগিতার পথ অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে থাকি।
পাশাপাশি আমি জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবক (ইউএনভি) হিসেবে ২০২২ সালে জাতিসংঘ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অন্তর্ভূক্তিকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে কাজ করেছি। আমার বহুমুখী অংশগ্রহণের মধ্যে কেবল সমন্বয় ও প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অন্তর্ভূক্তির প্রচেষ্টাই নেই, পাশাপাশি বাস্তবিক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করি আমি। যেমন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলায় প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অন্তর্ভূক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেছি আমি। এসব বৈচিত্র্যপূর্ণ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমি ইউএনএফপিএ এবং আরও বৃহত্তর পরিসরে জাতিসংঘকে আরও বেশি অন্তর্ভূক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত করার চেষ্টা করে চলেছি।
প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অন্তর্ভূক্তিকরণের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে রয়েছে ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না’–এর মতো নীতি, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার (ইউডিএইচআর) আর্টিকেল ২৫ এবং প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অধিকার সনদ (সিআরপিডি)। এসব নীতির মধ্যে সমাজের মানসিকতা ও নীতি পরিবর্তন করে দেওয়ার মতো সম্ভাবনা রয়েছে। ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না’–নীতিতে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষসহ সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিতকরণ, জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার (ইউডিএইচআর) আর্টিকেল ২৫–এ প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অন্তর্ভূক্তির কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তির অধিকার জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করে জাতিসংঘ সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা ও সেবাপ্রাপ্তির ওপর জোর দিয়েছে, যার সরাসরি সুবিধাভোগী হচ্ছে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষেরা। প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অধিকার সনদ (সিআরপিডি) একটি পরিকাঠামোর নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। এটি প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের সামগ্রিক অধিকারগুলোর সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেছে এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক অন্তর্ভূক্তিকরণে জোর দিয়েছে।
প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে জাতিসংঘের কাজগুলোর পরিসর আইনি পরিকাঠামোকে ছাপিয়ে গেছে। এই নীতিগুলোকে সমুন্নত রেখে জাতিসংঘ প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের বিষয়ে সামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি, নীতি নির্ধারণের বিষয়ে প্রচারণা এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক কাজের মাধ্যমে জাতিসংঘ প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিচ্ছে, তাদেরকে বৈচিত্য ও শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছে। এই রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ সমাজের প্রথাগত মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করছে, আরও অন্তর্ভূক্তিমূলক বক্তব্যকে উৎসাহিত করছে।
প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের বিষয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সবচেয়ে ভূমিকা রাখা বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এ ধরনের মানুষের ভিন্ন ধরনের সক্ষমতা ও অবদানের ওপর আলোকপাত করা। গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়া, অন্তর্ভূক্তিমূলক নীতি এবং প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয় এবং আর্থসামাজিক অবস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জন ও সক্ষমতাগুলো তুলে ধরার ফলে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসছে। ফলে এই মানুষদের এখন মানবসমাজের বৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে গ্রহণ করছে সবাই। এ ছাড়া সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির পক্ষে প্রচারণা প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ভেঙে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে।
আমি কয়েকজনকে চিনি, যাঁরা এ কাজ খুব ভালোভাবে করছেন। আমি এ ক্ষেত্রে দুজনের উল্লেখ করতে চাই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাস্কর ভট্টাচার্য এবং হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী আশরাফুন নাহার মিষ্টি। তাঁরা বাংলাদেশে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ভাস্কর ভট্টাচার্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য সবকিছু সহজ করা প্রযুক্তিগত সমাধানের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর আশরাফুন নাহার মিষ্টি প্রতিবন্ধকতার শিকার নারীদের বাধা দূরীকরণে এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের কাজ ও অর্জন বাংলাদেশে যাঁরা আরও অন্তর্ভূক্তিমূলক ও ন্যায্য সমাজ গঠনে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য উদাহরণ হতে পারে।
আগামী ৫ বছরের মধ্যে আপনি পেশাদার জীবনে কী অর্জন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন বা স্বপ্ন দেখেন?
আগামী পাঁচ বছরে আমি জাতিসংঘ ব্যবস্থায় আরও উচ্চ পর্যায়ে কাজ করতে চাই। জাতিসংঘে কাজ করার বিষয়ে নিজের স্বপ্নে সাড়া দিয়ে আমি এখন সক্রিয়ভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের বৈশ্বিক অন্তর্ভূক্তিকরণ উদ্যোগে অবদান রাখার চেষ্টা করছি। আরও উঁচু পর্যায়ে গিয়ে আমি বৈশ্বিক পর্যায়ে টেকসই ও ন্যায্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, এমন এক বিশ্ব গড়তে চাই, যা ব্যক্তির সক্ষমতার বিচার না করে সব মানুষের অন্তভূক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতিসংঘ মিশনকে আরও ন্যায়সঙ্গত, সহজ ভবিষ্যৎ গঠনের বিষয়ে আমার ভেতরকার তাগিদ আরও জোরালো করে।
সবশেষে কিছু বলতে চাইবেন?
সবশেষে আমি বলতে চাই, আমার এই যে পথচলা, তা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। এই গল্প নিজের প্রতিবন্ধকতা জয় করে ইউএনএফপিএতে প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভূক্তিকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করা এবং আরও বৃহত্তর পরিসরে জাতিসংঘ ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখার। এসব কাজের সময় আমি পরিবর্তনকে অণুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে চলেছি, প্রতিটা স্তরে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভূক্তিকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে চলেছি।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন বিবেচনায় জাহিদুলের অর্জন অসামান্য। তারপরও প্রকাশিতব্য জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ও উন্নয়ন প্রতিবেদন–২০২৩–এর প্রাথমিক অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের জন্য টেকসই উন্নয়নের কয়েকটি অভীষ্ট অর্জনে বিশ্ব পিছিয়ে পড়ছে। প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের জন্য, তাদের অংশগ্রহণে এই অভীষ্টগুলো অর্জনের প্রচেষ্টাকে আবারও সঠিক গতি দিতে জাতিসংঘ ব্যবস্থায় ও সমাজে আমাদের উদ্যোগগুলোকে তরাণ্বিত করতে হবে। প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষেরা ঐতিহাসিকভাবেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম। কখনো কখনো তাদের কেউ কেউ আরও পিছিয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতির ধরণে পরিবর্তন, সংহতি, অর্থায়ন ও পদক্ষেপ জরুরি। এই দেশের নীতি, অবকাঠামো, কল্যাণমূলক সেবা, শিক্ষা ব্যবস্থা ও মানবাধিকারে প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে বৈচিত্র্য প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। এতে আমরা আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক কর্মপরিবেশ পাব, জাহিদুলের মতো সহকর্মীকে পাশে পাব।