আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে, আমরা জোহারার মতো নারীদের সম্মান জানাই। কারন তাদের জীবনের এই গল্প যুগ যুগ ধরে আগামী প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। জোহরা, ৬৫ বছর বয়সী একজন বিধবা। তিনি বাংলাদেশের ঢাকায় একটি ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাস করেন। তার গল্পটি বর্তমান সময়ের সাথে গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক এমন একটি বিষয় নিয়ে যেমন: পরিবার পরিকল্পনা।
জোহরার গল্পে আমাদের ফিরে যেতে হবে অনেক পেছনে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি মা হন এবং চারটি ছেলে এবং চারটি মেয়েসহ মোট আটজন সন্তানকে লালন-পালন করেন। সর্বশেষ সন্তান জন্মগ্রহণের কিছুদিন পরই তাঁর স্বামী মারা যাবার পর, একক অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে জোহরা এক ভিন্ন পৃথিবীর মুখোমুখি হন।
ঢাকা শহরের মত ব্যয়বহুল একটি শহরে এত বড় একটি পরিবারের খরচ একা বহন করতে তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। প্রতিটি সন্তানকে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া ছিল একেকটি গোলকধাধার মতো। প্রতিদিনের সংগ্রামের মধ্যে, জোহরা এখন চিন্তা করেন- “যদি আমার সন্তানের সংখ্যা নির্বাচন করার ক্ষমতা থাকত, আমি দুটি সন্তানের বেশি নিতাম না।”
জোহরা এখন ছোট পরিবার থাকার সুবিধাগুলিকে উপলব্ধি করেন, যেখানে প্রতিটি সন্তানকে সমানভাবে বিকাশের সুযোগ দেওয়া যায়। জোহরা চান না তিনি নিজে যে ভুলগুলো করেছেন তা তাঁর মেয়েরাও যেন করে। তাই তিনি মেয়েদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিগুলোর ব্যবহারের ব্যাপারে আগে থেকেই ধারনা দেন।
জোহারার নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। নারী এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরিবার পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রজনন স্বাস্থ্যের অধিকার তাদের প্রত্যেককেই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ও স্বাধীনভাবে জীবন গঠনের সুযোগ দেয়।
বাংলাদেশে, পরিবার পরিকল্পল্পনা পদ্ধতি ব্যাবহারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় যার হার ছিল মাত্র ৫%, তা উল্লেখজনকভাবে বেড়ে আজ ৬৪% হয়েছে। তবুও, আমাদের কাজ শেষ হয়নি। বাংলাদেশে এখনও আনুমানিক ৫০ লক্ষ নারী রয়েছে যাদের নিরাপদ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই।
জোহারার বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানবাধিকারের কেন্দ্রবিন্দুতে নিহিত আছে পরিবার পরিকল্পনার অধিকার।
সূত্রঃ বিডিএইচএস