বাংলাদেশে মেয়েদের ক্ষমতায়নঃ জেন্ডার সমতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে মারজিয়া‘র গল্প
০২ নভেম্বর ২০২৩
১১ অক্টোবর ২০২৩
মারজিয়া, অত্যন্ত প্রাণবন্ত একটি মেয়ে যে কিনা জামালপুর জেলায় একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে উঠছিল। ১০ম শ্রেণিতে পড়া মেয়েটি যে এই সুন্দর মাটিতে বড় হয়েছে তার স্বপ্ন পূরণে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে একদল ছেলে তাকে অশালীন মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গি করতো।
একদিন ইউএনএফপিএ এর সহায়তায় পরিচালিত কিশোরী রিসোর্স সেন্টারে গিয়ে মারজিয়া নির্ভয়ে সকল ঘটনা খুলে বলে। কিশোরী রিসোর্স সেন্টার, তার বন্ধুবান্ধব এবং স্কুলের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির সহায়তায় সে তার হারানো মনোবল ফিরে পায় এবং সমাজ পরিবর্তনের এক দৃঢ় কন্ঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।
বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মেয়ে প্রতিদিন - বাল্যবিবাহ, কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ, শিক্ষা গ্রহণে বাধাসহ নানা ধরণের জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার সম্মুখীন হয়। এসব বাধা বিপত্তি তাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয় তাদের স্বপ্ন পূরণে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। মারজিয়া তার স্কুলে যাওয়া আসার পথে একদল ছেলের কাছ থেকে হয়রানির শিকার হয়। এসব মৌখিক ও শারীরিক নিপীড়ণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দৃষ্টির অগোচরে রয়ে যায় যার ফলে দিন দিন তা বাড়তেই থাকে।
নিরাপত্তার অধিকার পুনরুদ্ধারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ, মার্জিয়া UNFPA-সমর্থিত কিশোরী রিসোর্স সেন্টার (KRC)কে একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে খুঁজে পায় যেখানে সে খোলাখুলিভাবে তার ভয় এবং হতাশা নিয়ে আলোচনা করে। কিশোরী রিসোর্স সেন্টারের সদস্য ও তার বন্ধুদের সহায়তায় উদ্বিগ্ন পরিবেশ থেকে সে বের হয়ে আসে এবং মানসিক শক্তি ফিরে পায়। মারিজাকে তার উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য তার স্কুলে যৌন হয়রানিবিরোধী কমিটির কাছে রেফার করা হয়েছিল। কমিটি তার উদ্বেগকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল এবং অবিলম্বে এটি সমাধানের জন্য একজন শিক্ষককে নিযুক্ত করে। তারা নিশ্চিত করে সমান অধিকার এবং মূল্যবোধের গুরুত্বের পাশাপাশি যৌন হয়রানির আইনি পরিণতি সম্পর্কে নিপীড়নকারীদের সচেতন করা হয়েছে।
মার্জিয়া বলেন, "প্রথম দিকে, আমি ভেবেছিলাম যে মেয়েদের একসাথে দলে থাকা বা সন্ধ্যার পরে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে নিজেদের রক্ষা করা উচিত। "তবে, আমি বুঝতে পেরেছি যে প্রকৃত পরিবর্তন আসে যখন ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই জেন্ডার সমতা সম্পর্কে শিক্ষিত হয়, একে অপরকে সম্মান করে এবং হয়রানির আইনি পরিণতি বুঝতে পারে।"
মারিজা তার বাবা-মা, কিশোরী রিসোর্স সেন্টারের বন্ধু এবং তার স্কুলের বন্ধুদের সহায়তায় মনোবল ফিরে পেয়েছে । মারজিয়া তার এলাকায় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে যাতে করে সে একইভাবে ছেলেমেয়েদের পরামর্শ দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উদযাপনকালে, আমাদের অবশ্যই মার্জিয়ার মতো মেয়েদের সহায়তা করার গুরুত্ব মাথায় রাখতে হবে যারা সয়াব্র জন্য জেন্ডার সমতা ও একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত অর্জনে পরিবর্তনের সহায়ক চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশে, স্কুলে যাতায়াতের সময় বা বাইরে যাওয়ার সময় তাদের নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে অল্পবয়সী মেয়েদের প্রায়ই বাল্যবিবাহে বাধ্য করা হয়, কারণ অভিভাবকরা বিয়েকে নিরাপদ বিকল্প হিসেবে দেখেন। এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য, UNFPA এবং UNICEF এর সহায়তায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্বারা বাস্তবায়িত “এক্সিলারেটিং একশন টু এন্ড চাইল্ড ম্যারেজ” শীর্ষক প্রকল্প সারাদেশে কিশোরীদের জন্য কিশোরী রিসোর্স সেন্টার (KRCs) নামে নিরাপদ স্থান প্রতিষ্ঠা করেছে।
এই কিশোরী রিসোর্স সেন্টারসমূহ গ্রামীণ এলাকা এবং শহুরে বস্তিতে প্রায় 20,000 এরও বেশি কিশোরী মেয়েদের জেন্ডার ট্রান্সফরমেটিভ জীবন দক্ষতা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তাদের উন্নতি এবং বিকাশের সুযোগ প্রদানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে । এই কেন্দ্রগুলির মধ্যে কাঠামোগত অধিবেশনগুলি যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, জেন্ডার সমতা, শারীরিক স্বায়ত্তশাসন, মাসিক স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, যৌন বাহিত সংক্রমণ এবং জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে আলোচনা করে। UNFPA তার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল রয়েছে যাতে করে বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে একটি নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে এবং সে তার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারে।