মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৭৫ বছর: জাতিসংঘের আয়োজিত ডিজিটাল আইন এবং বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি আইনমন্ত্রী
২১ মে ২০২৩
ঢাকা, ২১ মে ২০২৩: মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বর্ষপূতিকে কেন্দ্র করে ‘মানবাধিকার ৭৫’ প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে। এই বর্ষপূর্তি উদযাপনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগিতায় ডিজিটাল আইন এবং বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করে।
গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) একজন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তাঁর মন্তব্যে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন
এবং বলেন যে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সাথে আলোচনার পর সংশোধন করা হবে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে কারিগরি মন্তব্য প্রদান করেছে। তিনি এই বিষয়ে যুব সমাজের সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন।
‘বাংলাদেশের ডিজিটাল আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড সংক্রান্ত অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে মত ও দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ ও যুব সমাজের মধ্যে আয়োজিত এই সংলাপে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমি মাননীয় মন্ত্রী আনিসুল হক ও সম্মানিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শুধুমাত্র এই আলোচনার মাধ্যমে এবং একে অপরের কথা শোনার মাধ্যমে আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে পারি।‘
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেসহ দুই হাজারের বেশি মামলা হওয়ায়, কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক আইনটি অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আইনটির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে যেসব মন্তব্য পাঠিয়েছিল, ওএইচসিএইচআর–এর টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সেগুলো ব্যাখ্যা করেন। তিনি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন, জামিনের অনুমতি, পুলিশকে দেওয়া ব্যাপক ক্ষমতা সীমিতকরণ ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কয়েকজন বিশিষ্ট আলোচক বাংলাদেশে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স সম্পর্কে তাঁদের অভিমত তুলে ধরেন এবং এর উন্নয়নের জন্য কিছু সুপারিশ ব্যক্ত করেন।
গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ডজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় তাঁদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশেষত ডিজিটাল পরিসরে মানবাধিকারের ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুব সমাজের ভূমিকার গুরুত্ব উঠে এসেছে।
আরও তথ্য
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র (ইউডিএইচআর) মানবাধিকারের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী দলিল। পৃথিবীর সকল অঞ্চল থেকে আসা ভিন্ন ভিন্ন আইনি ও সাংস্কৃতিক পটভূমির প্রতিনিধিদের দ্বারা রচিত এই দলিলে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর সকল মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার কথা বলা হয়।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বর্ষপূর্তি (‘মানবাধিকার ৭৫’) উদযাপিত হবে ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর। এই যুগান্তকারী উদযাপনের প্রাক্কালে, মানবাধিকার ৭৫-এর মধ্য দিয়ে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের চেতনা, আবেগ ও শক্তি পুনরুজ্জীবিত হবে এবং মানবাধিকারের পক্ষে বিশ্বব্যাপী ঐকমত্যের নবায়ন ঘটবে।
‘মানবাধিকার৭৫’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসাবে আয়োজিত এই গোলটেবিল আলোচনাটি মানবাধিকারের সর্বজনীনতা ও অপরিহার্যতা সম্পর্কে সচেতনতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি করার এবং মানবাধিকারের পক্ষে জনসাধারণের, বিশেষত যুব সমাজের, লড়াইয়ের সামর্থ্য বাড়ানোর একটি প্রয়াস। বছরব্যাপী এই প্রচারাভিযানের উদ্দেশ্য হলো মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের সর্বজনীনতা এবং প্রাসঙ্গিক কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মতৎপরতায় পরিবর্তন আনা।