রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্যসাহায্য হ্রাস: বাংলাদেশে জরুরি অর্থায়নে জাতিসংঘের আবেদন
০১ জুন ২০২৩
আজ, ১ জুন থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাসিক খাদ্য ভাউচার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার কমানো হচ্ছে - এটি হবে দৈনিক রেশনের ৩৩% হ্রাস।শরণার্থীদের প্রত্যেককে মাত্র ৮ মার্কিন ডলার (৮৪০ টাকা) সমমূল্যের ফুড ভাউচার দেয়া হবে প্রতি মাসে। এটুকুই শরণার্থীদের জীবন ধারণের উপায়, অন্য কোনো বিকল্প তাদের নেই। মা-বাবারা ইতোমধ্যে কম খাচ্ছেন, যাতে তাদের সন্তানেরা খেতে পায়। রেশনের কাটছাঁট প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর জীবনে প্রভাব ফেলবে, যারা খাদ্যসাহায্যের উপরেই নির্ভরশীল, যাদের জীবনধারণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ-সম্ভাবনা নেই।
চলতি বছরের শুরুতে শরণার্থীরা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) থেকে মাথাপিছু মাসিক ১২ মার্কিন ডলার মূল্যমানের রেশন পাচ্ছিলেন, যা দিয়ে কেবল তাদের দৈনিক চাহিদাটুকু মিটত। কিন্তু অর্থায়নের অভাবে ১ মার্চ থেকে তাদের মাথাপিছু মাসিক রেশন কমিয়ে ১০ মার্কিন ডলার করা হয়। এখন থেকে তা হবে মাত্র ৮ মার্কিন ডলার মূল্যমানের।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্যসাহায্য হ্রাস করা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, “আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্যসাহায্য কমাতে বাধ্য হচ্ছে। শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে এর ফল হবে ভয়াবহ; নারী, শিশু ও সবচেয়ে নাজুক মানুষেরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আবেদন জানাচ্ছি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায়, তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, খাদ্য ও শিক্ষার জন্য, মোট যে পরিমাণ অর্থ দরকার তার মাত্র ২৪.৬ শতাংশের অর্থায়ন মিলে; এই শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতার আর কোনো উৎস নেই। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বসবাসরত মানুষের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই; তারা সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থায়নের উপর।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন-রক্ষাকারী সহায়তায় এই নতুন কাটছাঁটের উদ্যোগ নেওয়া হলো এমন এক সময় যখন তারা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব আর সেই সঙ্গে তাদের শিবিরগুলোতে এই বছরের বিরাট এক অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন; যার ফলে হাজার হাজার শরণার্থীর সাহায্য ভীষণ প্রয়োজন।
চলতি বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা বিশেষভাবে নাজুক, কারণ ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যের যে আবেদন ২০২৩ সালে করা হয়েছে, ১ জুন নাগাদ তার মাত্র ২৪.৬ শতাংশ অর্থায়ন মিলেছে; এর ফলে অন্যান্য জরুরি কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডেও কাটছাঁট করা হচ্ছে।
আরও তথ্য:
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো মানবিক সাহায্য সংস্থা, যা বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন রক্ষার কাজে নিয়োজিত রয়েছে এবং সংঘাত, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে খাদ্যসাহায্য প্রদানের মাধ্যমে মানুষের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের পথ নির্মাণে কাজ করে চলেছে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতজনিত ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি। তাদের জন্য জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের অংশীদার সংস্থাগুলো গত ২৩ মে ৪২.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যের আবেদন জানায়। ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ৩৩টি শরণার্থী শিবির এবং আশপাশের বাংলাদেশি গ্রামগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রেস অফিসে যোগাযোগ
- কুন লি, হেড অব পার্টনারশিপস, কমিউনিকেশন অ্যান্ড রিপোর্টিং, ডব্লিউএফপি বাংলাদেশ, kun.li@wfp.org, +880 1322846137
- ইগর সাজোনভ, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়, igor.sazonov@un.org, +8801321169633