প্রেস রিলিজ

সংকট থেকে উত্তরণ: ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সেবাগুলোর ওপর আলোকপাত করেছে

০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নতুন এক যৌথ প্রতিবেদনে নারী শিশুদের ক্ষমতায়নের জন্য ভুক্তভোগী-কেন্দ্রিক এবং ট্রমা-অবহিত পরিষেবা প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে

ফটো: © UNICEF Bangladesh/2023

ঢাকা, বাংলাদেশডিসেম্বর , ২০২৩ – জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনব্যাপী প্রচারনার অংশ হিসেবে ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেন আজ যৌথভাবে একটি মেটা-বিশ্লেষণের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষণটিতে, কোভিড-১৯ মহামারির ফলে  জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার (জিবিভি) ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বাংলাদেশের নারী, মেয়ে, শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে মোকাবিলা করছে - তা তুলে ধরা হয়।

নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে জাতিসংঘের তিনটি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় "ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা সহায়তা: জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য অপরিহার্য সেবা" শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের অপরিহার্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং সামাজিক পরিষেবার সাথে ও ভুক্তভোগীদের সঠিক যোগসূত্র স্থাপনের জন্য প্রতিবেদনে জোর দেয়া হয়।

বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো – ভুক্তভোগী-কেন্দ্রিক এবং ট্রমা-অবহিত সেবা নিশ্চিত করা। এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে নারী ও শিশু, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা সহজে ও বিনা সঙ্কোচে সহায়তা চাইতে পারবে; আর এভাবে শিশুবিয়ে, পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার (জিবিভি) ক্ষতিকর প্রথাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

ফটো: © UNICEF Bangladesh/2023

ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহাম বলেন, "এখনই সময় জিবিভির শিকার ব্যক্তিরা, যেসব বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় সেগুলো মোকাবিলায় একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়া ব্যাবস্থা গ্রহণ করার।" তিনি আরও বলেন, "নারী ও শিশুরা ভালোভাবে বেঁচে থাকার ও পূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সেবাগুলো যাতে সময়মত পায় তা নিশ্চিত করতে আসুন আমরা আমাদের প্রতিরোধ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করে তুলি।"

ইউএন উইমেনের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ৯৩% নারী জানিয়েছেন যে তারা নিজেরা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতার (ভিএডব্লিউজি) শিকার হয়েছেন অথবা অন্য এমন নারীকে তারা চেনেন যিনি এর শিকার হয়েছেন।1 এছাড়াও, বিশ্বে যেসব দেশে শিশুবিয়ের হার সর্বোচ্চ, বাংলাদেশ এখনও সেই দেশগুলোর কাতারে রয়েছে, যেখানে ২২ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের অর্ধেকের বেশির বিয়ে হয়েছে যখন তারা শিশু ছিলেন।2

ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ মাসাকি ওয়াতাবে বলেন, "সহিংসতার শিকার নারী ও মেয়েদের জন্য অপরিহার্য সেবা প্যাকেজ (ইএসপি) হলো জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য, সামাজিক সেবা, বিচার ও পুলিশ– এই চার গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে জাতীয় ব্যবস্থাকে সমর্থন করা জাতিসংঘের একটি বৈশ্বিক নির্দেশিকা। ইউএনএফপিএর পক্ষ থেকে এবং ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেনের সঙ্গে মিলে একত্রে, আমি বাংলাদেশে ইএসপি পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত ঘাটতিগুলো পূরণ করতে সরকারের প্রচেষ্টোয় সহায়তা প্রদানে আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। এই সবকিছু অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ও সুশীল সমাজের সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"

ইউএন উইমেন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শ্রাবনা দত্ত বলেন, "নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ জোরদার করতে সামগ্রিক ও সমন্বিত উপায়ে কাজ করা এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য। সহিংসতা প্রতিরোধ প্রচেষ্টায় আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ইউএন উইমেন সরকার, সুশীল সমাজের অংশীদার এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।”

ফটো: © UNICEF Bangladesh/2023

প্রতিবেদনে উঠে আসা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো:

  • আইনগত কাঠামোতে অসামাঞ্জতা : বিচার সেবা মূল্যায়ন করতে গিয়ে লিগ্যাল ফ্রেইমওয়ার্ক বা আইনগত কাঠামোতে অসামাঞ্জস্য দেখা গেছে যেমন ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার অধীনে ধর্ষণের সংজ্ঞা থেকে শিশুবিয়ে ও বৈবাহিক ধর্ষণকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
  • পুলিশি ও বিচার সেবার চ্যালেঞ্জসমূহ: মূল্যায়নটি পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি ভুক্তভোগী-কেন্দ্রিক এবং ট্রমা উপর বিশেষ জ্ঞান সম্বলিত পদ্ধতি অবলম্বনের আহ্বান জানায়।
  • স্বাস্থ্য সেবাসমূহের সমন্বয়: চিকিৎসা ও বিচার সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়ার মাধ্যমে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
  • সামাজিক সেবায় বিনিয়োগ: প্রতিবেদনে সামাজিক সেবায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে এবং এমন একটি দল গঠনের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যারা কমিউনিটির সবার কাছে পৌঁছানো, সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মনো-সামাজিক সমর্থন প্রদানে সক্ষম।

প্রতিবেদনে সরকার, সুশীল সমাজ, নারী অধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর জন্য করা সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে সক্ষমতা বাড়ানো, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি)-সংক্রান্ত অপরিহার্য সেবা সম্পর্কিত তথ্য সহজলোভ্য করা,  ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করা।

প্রস্তাবিত সুপারিশমালার মাধ্যমে দেশে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার মানুষগুলো যে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তা মোকাবিলা করার জন্য একটি বিস্তৃত ও কার্যকরী পদ্ধতি সম্বলিত এক নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।

ফটো: © UNICEF Bangladesh/2023

 

 

 

 

আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:

 

ইউএনএফপিএ মিডিয়া যোগাযোগ

আসমা আক্তার, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ, টেলি: +880 171 167 3555, asma@unfpa.org

 

ইউনিসেফ মিডিয়া যোগাযোগ:  

ফারিয়া সেলিম, ইউনিসেফ বাংলাদেশ টেলি: +880 181 758 6096, fselim@unicef.org 

ফারজানা সুলতানা, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, টেলি: +880 191 151 9507, fasultana@unicef.org

 

ইউএন উইমেন মিডিয়া যোগাযোগ

শারারাত ইসলাম, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ, টেলি: +880 171 173 9852, shararat.islam@unwomen.org

এই উদ্যোগে জাতিসংঘের যে সকল সংস্থা যুক্ত

ইউএন উইমেন
জাতিসংঘ জেন্ডার-সমতা ও নারী ক্ষমতায়ন সত্তা
ইউএনএফপিএ
জাতিসংঘ জনসংখ্যা-বিষয়ক কর্মসূচী কার্যকারক সংস্থা
ইউনিসেফ
জাতিসংঘ শিশু-বিষয়ক সংস্থা

এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা যে টেকসই লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিচ্ছি