প্রেস রিলিজ

জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ সিইআরএফ তহবিল বরাদ্দ দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে

০৬ মার্চ ২০২৩

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘ কেন্দ্রীয় জরুরি সহায়তা তহবিল (সিইআরএফ) এর তরফ থেকে ৯ মিলিয়ন ডলারের অধিক তহবিল বরাদ্দের পর ছয়টি জাতিসংঘ সংস্থা কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সরকার ও তাদের অংশীদারদের সাথে যৌথভাবে জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ  শরণার্থীদের জন্য তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার, খাদ্য সহায়তা, পানি, পয়ঃ নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ডব্লিউ এ এস এইচ) পরিষেবা এবং সুরক্ষা প্রদান করছে। নারী, বালিকা ও প্রতিবন্ধীদের জন্যও উক্ত প্রকল্পসমূহের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হবে।

কক্সবাজার জেলা এবং ভাসানচর দ্বীপের শিবিরে অবস্থানকারী ৯,৪৩,০০০ এর অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং উখিয়া ও টেকনাফে বসবাসকারী ১৭,৮০০ জন বাংলাদেশীর জন্য জীবন রক্ষাকারী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২২ সালের নভেম্বরে সিইআরএফ কর্তৃক জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউ এন এইচ সি আর), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), ইউএন উইমেন এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর মতো ছয়টি জাতিসংঘ সংস্থার অনুকূলে ৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়।

আইওএম এবং ইউএনএইচসিআর কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে অবস্থানকারী শরণার্থী পরিবারগুলোকে এলপিজি  বিতরণ করছে। এর ফলশ্রুতিতে মোট ৮,৫৬,৮৫১ জন শরণার্থী তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার পেতে শুরু করেছে। এলপিজি বিতরণের ফলে শরণার্থীদের স্বাস্থ্য এবং বাসস্থানের পরিবেশ সুরক্ষিত হয়েছে, কারণ এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ধোঁয়া গ্রহণের পরিমাণ এবং বন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহকালীন সুরক্ষা ঝুঁকি হ্রাস পায় । কক্সবাজারে আইওএম এবং ইউএনএইচসিআর কর্তৃক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী শরণার্থীসহ সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রাম ও সচেতনতা সৃষ্টিকারী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সেবাও  প্রদান করা হচ্ছে। 

কক্সবাজার ও ভাষানচর এলাকায় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য (এস আর এইচ) এবং জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি)  সমন্বয় মধ্যস্থতায় সহায়তা করার জন্য ইউএনএফপিএ ২,৫০,০০০ ডলার বরাদ্দ পেয়েছে। ইউএনএফপিএ পরিচালিত প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ৩,৩৫,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও বালিকাকে যেকোনো ধরনের 'জিবিভি' হতে সুরক্ষা প্রদান ও এ সংক্রান্ত সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করা। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বাস্তবায়িত হবে এমন যেসব প্রকল্পে 'ইউএনএফপিএ' সহায়তা প্রদান করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজনন স্বাস্থ্য কিট, পণ্য, ঔষধ এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন বিভিন্ন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির পাশাপাশি ধর্ষণ-পরবর্তী শুশ্রুষা কিট সংগ্রহ ও বিতরণ, এসআরএইচ/জিবিভি সংক্রান্ত বিভিন্ন রেফারেল সেবা জোরদার করা, জিবিভি ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী কর্তৃক সহিংসতা পরবর্তী ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মীদের সামর্থ্য গঠন, মিডওয়াইফ নিয়োগের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা স্থাপনা গুলোর মধ্যে জিবিভি সংক্রান্ত ঘটনা সুরাহার ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে নারীবান্ধব পরিবেশে নানা ধরনের মৌলিক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা।

ইউনিসেফ ও এর অংশীদারগণ একটি সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে ভাসানচর এলাকায় জরুরি শিশু সুরক্ষা ও জিবিভি সংঘটন প্রতিহত করা এবং এ সংক্রান্ত সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা ও তাদের ক্ষমতায়নের অনুকূল বিভিন্ন কার্যক্রমের মিশ্রনে গঠিত হয়েছে উক্ত সমন্বিত পদ্ধতি। শিশুরা ঘটনা মোকাবেলা, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং জীবনমুখী দক্ষতা ভিত্তিক শিখনের সুযোগ পেয়েছে। ইউনিসেফ কক্সবাজার ও ভাসান চরে বসবাসকারী ৪৮,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য পানি, পয়ঃ নিষ্কাশন ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি (ডব্লিউ এ এস এইচ) পরিষেবাও প্রদান করবে।

ইউএন উইমেন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে সহিংসতার পর বেঁচে থাকা এবং জিবিভি ঝুঁকিগ্রস্তদের জন্য জীবন রক্ষাকারী ও আবশ্যকীয় জিবিভি সেবাসমূহ ও সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি করছে। সংস্থাটি ইতোমধ্যে শিবির গুলোতে পাঁচটি বহুমুখী নারী কেন্দ্র চালু করেছে এবং এই বহুমুখী কেন্দ্রগুলোতে জীবিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ও জিবিভি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সিইআরএফ তহবিল বরাদ্দ করা হবে।

'ডব্লিউএফপি' বিভিন্ন 'ফুড ভাউচারের' মাধ্যমে শরণার্থীদেরকে খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করছে। শিবিরগুলোর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ডব্লিউএফপি আউটলেটগুলোতে ব্যাপক পরিসরে নানা ধরনের শুকনো ও তাজা খাবার এই  ফুড ভাউচারগুলোর বিনিময়ে ক্রয় করা যাবে।  অবশ্য তহবিল স্বল্পতার কারণে, 'ডব্লিউএফপি' এই ফুড ভাউচারের মূল্য প্রতিমাসে জনপ্রতি ১২ ডলার হতে কমিয়ে ১০ ডলার করতে বাধ্য হয়েছে, যা ১ মার্চ থেকে চালু হবে। এই কর্তন এমন এক সময় এলো যখন পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে 'ডব্লিউএফপি' এর উপর নির্ভরশীল এবং এদের শিশু ও নারীরা ইতোমধ্যে উচ্চ হারে অপুষ্টিতে আক্রান্ত।

২০২২ সালের নভেম্বরে তহবিল বরাদ্দের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, "শরণার্থী ও এদেশীয় জনগোষ্ঠীকে তাদের নিত্যদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে অপর্যাপ্ত তহবিল নিয়ে পরিচালিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সহায়তা কার্যক্রমের অনুকূলে উক্ত তহবিলসমূহ বরাদ্দ প্রদানের ব্যাপারে জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারীর সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো স্বাগত জানায়। বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় এনজিওসমূহের সাথে পরামর্শক্রমে সিইআরএফ কর্তৃক বরাদ্দকৃত এই অর্থের মাধ্যমে শরণার্থীদের সুরক্ষা প্রদান, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলা এবং শরণার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ রচনা করা সম্ভব হবে।"

সিইআরএফ এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে দাতাগণ আগাম একটি যৌথ-তহবিল গড়ে তোলে এবং যেখানেই সংকট হানা দেয় সেখানে প্রাথমিক ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে অতিরিক্ত তহবিলের জন্য অপেক্ষার কালে মানবিক ত্রাণ সংস্থাসমূহকে উক্ত যৌথ তহবিল হতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।

 

অতিরিক্ত তথ্যের জন্য সিইআরএফ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন। তহবিল বরাদ্দ সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্যের জন্য 'ওসিএইচএ' ফিনান্সিয়াল ট্র্যাকিং সার্ভিস দেখুন।

 

 

 

 

 

এই উদ্যোগে জাতিসংঘের যে সকল সংস্থা যুক্ত

আরসিও
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস

এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা যে টেকসই লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিচ্ছি