আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো এর বাণী
২৯ মে ২০২১
পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী নিযুক্তকারী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থানে থাকা বাংলাদেশ গত ৩৩ বছরে খুব দ্রুত বীরত্ব, দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা, নেতৃত্ব এবং পেশাদারিত্বের সুনাম অর্জন করেছে। মালি, দক্ষিণ সুদান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো’র মতো কয়েকটি কঠিন স্থানসহ দশটি মিশনে মোট ১,৭৫,৩১৬ জন শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে ৬,৮৭৪ শান্তিরক্ষী নিযুক্ত রয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত কার্যকরী একটি হাতিয়ার। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ৫/১৯৯ (২০০২) নং রেজুলেশন গৃহীত হবার পর ২০০২ সাল থেকে ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যে সকল সাহসী এবং পেশাদার পুরুষ ও নারীগণ অবদান রেখেছেন তাঁদেরকে স্মরণ করতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এই দিবসটির প্রতিপাদ্য হল - "দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ: দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সুরক্ষার জন্য যুবসমাজের শক্তি একত্রিকরণ যার মাধ্যমে জাতিসংঘের যুব, শান্তি ও সুরক্ষা (ওয়াইপিএস) এজেন্ডার গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ৩০ বছরের কম বয়সী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীগণ প্রায়শই যুবসমাজের সাথে সংযোগ স্থাপনে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে রোল মডেল হিসেবে সেবা প্রদানে অধিক পারদর্শি হন। এর মাধ্যমে স্থানীয় সম্প্রদায়ের তরুণদের সম্পৃক্ত করে টেকসই শান্তি অর্জনে উৎসাহিত করা হয়।
১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজার্ভার গ্রুপে (UNIMOG) ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে শান্তিস্থাপন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নামিবিয়ার জাতিসংঘের ট্রানজিশন অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপে (UNTAG) বাংলাদেশ প্রথম সামরিক দল পাঠায়।
পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী নিযুক্তকারী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থানে থাকা বাংলাদেশ গত ৩৩ বছরে খুব দ্রুত বীরত্ব, দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা, নেতৃত্ব এবং পেশাদারিত্বের সুনাম অর্জন করেছে। মালি, দক্ষিণ সুদান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো’র মতো কয়েকটি কঠিন স্থানসহ দশটি মিশনে মোট ১,৭৫,৩১৬ জন শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে ৬,৮৭৪ শান্তিরক্ষী নিযুক্ত রয়েছেন।
উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি (WPS) এজেন্ডা আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএন সিকিউরিটি কাউন্সিলের রেজুলিউশন ১৩২৫ এর মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল। মহিলা শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানোয় জাতিসংঘের মহাসচিবের কর্মসূচী বাস্তবায়নে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী পথ দেখায়। এ পর্যন্ত মোট ১৯৭৪ জন নারী শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে ৩১৯ জন দায়িত্বে নিযুক্ত আছেন।
১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের সকল শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বিভিন্ন দেশের ৪,০৫৬ জন নিহত বীরের প্রতি আজ আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তাঁদের মধ্যে ১৫৯ জন বাংলাদেশী বীরসেনা রয়েছেন। দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের ২৪০ জন শান্তিরক্ষী আহতও হয়েছেন।
গত এক বছরে বাংলাদশের আটজন নিবেদিত শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। বিশ্বে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত প্রতিষ্ঠায় আরো এগারো জন আহত হয়েছেন।
নিহত শান্তিরক্ষীগণ হলেন:
সার্জেন্ট মোহাম্মদ ইবরাহিম; ল্যান্স কর্পোরাল মো: সাইফুল ইসলাম; ল্যান্স কর্পোরাল মো: আমদুল্লাহ আল মামুন; ল্যান্স কর্পোরাল মো: রবিউল মোল্লা; সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল হালিম; ওয়ারেন্ট অফিসার মো: সাইফুল ইমাম ভুইয়া; সার্জেন্ট মো: জিয়াউর রহমান; সার্জেন্ট মো: মোবারক হোসেন।
জাতিসংঘ সর্বদা শান্তিরক্ষার্থে নিহত বীরদের ত্যাগকে স্মরণ করে ও সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে। এর পাশাপাশি নিহতদের শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানায়। নিহত আটজন শান্তিরক্ষীর অবদানকে বিশ্বসম্প্রদায় সর্বদা স্মরণ করবে। এছাড়া আহত শান্তিরক্ষীগণও বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের ঐকান্তিকতা প্রদর্শন করেছে।