শস্য বৈচিত্র্য কৃষকদের জলবায়ু সহনশীলতা এবং আয় বৃদ্ধি করে
জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ এবং বাংলাদেশ সরকার ক্ষুদ্র কৃষকদের শষ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে এবং উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদনে আগ্রহী করছে।
স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পটি (এসএসিপি) কৃষকদের সক্রিয় ও প্রতিযোগিতামূলক ভাবে বাজারে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও পরিষেবা দিচ্ছে। একইসাথে, শস্য বৈচিত্র্যকরণ, উচ্চ-মূল্যের ফসল উৎপাদন, তাজা ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকদের আয়, এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কাজ করছে প্রকল্পটি ।
জাতিসংঘের কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি ২০১৮ সাল থেকে উপকূলীয় ১১টি জেলায় বাস্তাবায়িত হচ্ছে এবং কারিগরি সহযোগিতা প্রদানে এফএও এই প্রকল্পে কাজ করছে।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে বাস করেন ৫৮ বছর বয়সী কৃষক মোহাম্মদ আবুল কালাম যিনি এই প্রকল্পে অংশগ্রহন করে উপকৃত হয়েছেন। উপকূলের এই জেলায় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, মাটির লবণাক্ততা এবং মাটি ক্ষয়ের ভয়াবহতা বেশি। অন্যদিকে ধান এখনও পর্যন্ত সেখানকার কৃষকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফসল। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাবার ভাত, আবার উৎপাদনের ক্ষেত্রেও প্রধান ফসল ধান। কিন্তু, ধান চাষিদের আয় এখনো অনিয়মিত এবং অপর্যাপ্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে ধান উৎপাদন অনেকাংশেই ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে এবং কৃষকদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে একইসাথে ফসল উৎপাদনে বৈচিত্র আনতে আগ্রহী কৃষকরা প্রায়ই প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান, তথ্য ও পরিষেবার সুবিধা পান না।
এই বাধা মোকাবেলা করতে এবং সব্জির আরো ভালো চাষাবাদের জন্য এসএসিপি প্রকল্প কালামের মতো ক্ষুদ্র কৃষকদের যথাযথ কৃষি উপকরণ, প্রযুক্তি ও কৌশলগত পরামর্শ প্রদান করে যাতে করে তারা বিনিয়োগের আশানুরূপ ফলাফল পান। বাজার গবেষণায় উচ্চ চাহিদা প্রমাণিত হওয়ায় প্রকল্প কালামকে লাউ, করলা, ফুলকপি এবং টমেটো চাষ করার পরামর্শ দেয়। সেই পরামর্শ অনুসরণ করে এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, তিনি এই ফসলের সর্বোত্তম বপন এবং কাটার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে পারেন, যার ফলে তার উৎপাদন এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে কৃষিতে সহনশীলতা আনতে অন্যতম একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে শস্য বৈচিত্র্য - অর্থাৎ কৃষি উৎপাদনে নতুন ফসল বা পদ্ধতির সংযোজন করা। একইসাথে প্রচলিত প্রধান শস্যের বাইরে নতুন ধরনের শস্য আবাদ করে কৃষকরা তাদের উপার্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তাও বাড়াতে পারেন। শস্য বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধাগুলো হচ্ছে অ-প্রধান খাদ্য শস্য চাষের জন্য অপর্যাপ্ত কৃষি সম্প্রসারণ সহযোগিতা, সীমিত উৎপাদন, এবং কৃষি উপকরণ বাজারের স্বল্পতা।
কালাম একজন উদ্যোগী কৃষক যিনি শষ্য বৈচিত্র ও নতুন কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করে তার জমিতে কাজ করেন। তার অভিজ্ঞতা তিনি অন্য কৃষকদের শোনাতে চান এবং প্রয়োজনে হাতে কলমেই শেখাতে চান। তিনি বিশ্বাস করে নতুন তথ্য ও দক্ষতার এই বিনিময় আর গ্রামের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
“আমি যে জমিতে কাজ করি তা আমার, এবং গ্রামটি আমার। আমার জমির মতোই অন্য জমিগুলোরও যত্ন হওয়া উচিত যাতে করে সে জমিগুলো বছরব্যাপী বিভিন্ন ফসল দিতে পারে। সমস্ত জমি, এমনকি অনুর্বর কিংবা প্রান্তিক এলাকা, সব জমিরই ভাল যত্ন নেওয়া উচিত। নতুন নতুন তথ্য ও উদ্ভাবনকে ব্যবহার করে আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে পারি এবং আরো ভালো জাতের ফসলের উৎপাদন করে সফল হতে পারি,” তিনি বলেন।
তার কৃষি কাজের সাফল্য দেখে, কালামকে তার উপজেলায় প্রধান কৃষক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। কালাম এখন চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুতকরন, বপন, সার প্রয়োগ এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতা উপজেলার অন্যান্য কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, “আমার গত বছর একটি ফুলকপি প্রদর্শনী প্লট ছিল, যা থেকে খুব ভাল ফসল এসেছিলো। আমি ৫৫০,০০০ টাকা মূল্যের পণ্য বিক্রি করে উল্লেখযোগ্য লাভ করেছি। এই বছর, আমি প্রকল্পের সহায়তায় একই জমিতে করলা আবাদ করছি।” তিনি আরো বলেন, “আমার উপজেলায় যেসব কৃষক তাদের ফসলের ধারা ও ধরণকে উন্নত করতে চান, সরকারি কৃষি অফিস তাদেরকে অনেক সহযোগিতা করছে। এখন দেখছি আমার গ্রামের প্রায় অর্ধেক কৃষকই সারা বছর বিভিন্ন সবজি চাষ করছে ।”