প্রেস রিলিজ

বাংলাদেশকে অবশ্যই অভিবাসী আইন জোরদার করতে হবে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

৩১ জানুয়ারী ২০২৩

নিয়োগ প্রক্রিয়া বর্তমানে অনেক অভিবাসীর ওপর অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন । এই অতিরিক্ত ব্যয়ের সিংহভাগের কারণ “মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা”

ঢাকা (৩১ জানুয়ারি ২০২৩) – অভিবাসী কর্মীদের শোষণ ও নিপীড়ন থেকে রক্ষায় বাংলাদেশকে অবশ্যই অভিবাসী নিয়োগ ব্যবস্থার আইনকানুন জোরদার করতে হবে। জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ আজ এ কথা বলেছেন।

বাংলাদেশে ১০ দিনের সফরে এসেছিলেন অভিবাসীর মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ফিলিপ গঞ্জালেয মোরালেস। এই সফরের শেষে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বর্তমানে অনেক অভিবাসীর ওপর অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন । এই অতিরিক্ত ব্যয়ের সিংহভাগের কারণ “মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা”।’

গঞ্জালেয মোরালেস অভিবাসীদের দেশত্যাগপূর্ব-প্রক্রিয়া, বিদেশে কাজের সময় এবং দেশে প্রত্যাবর্তনসহ অভিবাসনের সর্বস্তরে তাদের অধিকারের সুরক্ষা দেওয়ার প্রতি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার বিবৃতিতে বলেন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধিসহ অভিবাসীদের কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিতে নিয়োগ ব্যবস্থা জোরদার, নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা এখনো প্রয়োজন।

এই বিশেষজ্ঞ এ ক্ষেত্রে সরকারি (জিটুজি) প্রক্রিয়ায় দক্ষ অভিবাসী নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় নিয়মকানুন জোরালোভাবে অনুসরণ করা এবং পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে রাখা অভিবাসীদের জন্য বেশি সুবিধাজনক। গঞ্জালেয মোরালেস বলেন, ‘সমস্যাটা হয় কম দক্ষ অভিবাসীদের। দারিদ্র্য, শিক্ষার ঘাটতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়ায় এ ধরনের অভিবাসীরা শোষণসহ প্রায়শ নানা ধরনের হুমকির মুখে পড়ে।’

দক্ষ অভিবাসী কর্মী গড়তে চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করেন বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার। তবে তিনি বলেন, এই কর্মীদের দেশত্যাগের আগে পর্যাপ্ত তথ্য জানাতে হবে। কোথায় নিপীড়নের শিকার হলে প্রতিকার খুঁজতে হবে এবং তা ভালোভাবে জানাতে হবে। তিনি বিদেশ গমণেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদের ডেটাবেজ তৈরির বিষয়টিকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারীদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করাসহ তাদের নিয়ন্ত্রণে জোরদার পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।

গঞ্জালেয মোরালেস বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলেন, অভিবাসী কর্মীরা যে দেশে কাজ করেন, সেসব দেশেরও তাদের প্রতি সমান দায়দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অভিবাসী কর্মীদের জোরালো সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এসব দেশেরও নিজ নিজ তরফ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশেষ করে নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ কাজের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।’

বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘অভিবাসীদের গন্তব্য দেশগুলো বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যে অবস্হিত। গন্তব্য দেশগুলোর অবশ্যই বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি বাংলাদেশেরও কনস্যুলার সেবা জোরদার করা অব্যাহত রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ সফরের সময় বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কক্সবাজারে যান। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য গঞ্জালেয মোরালেস বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহনশীলতা দেখে অভিভূত। তাদের অনেকে পাঁচ বছর ধরে শিবিরে আছে। বাকিরা নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এ দেশে এসেছে, তারাও ৩০ বছর ধরে শিবিরে আছে।

বিবৃতিতে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান অত্যন্ত জরুরি।’ রোহিঙ্গাদের আইনি মর্যাদা না থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তিনি যেসব শিবির পরিদর্শন করেছেন, সেখানে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্মসনদ দেওয়া হয়নি।

এই বিশেষজ্ঞ রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ ও দক্ষ হয়ে উঠতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার করার প্রতি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে অনেক রোহিঙ্গাই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। বিবৃতিতে তিনি বিশেষত অগ্নিকাণ্ড ও বন্যাসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মাথায় রেখে শিবিরের আবাসন ব্যবস্থার মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

*********

 

ফিলিপ গঞ্জালেয মোরালেস (চিলি) জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ কর্তৃক ২০১৭ সালের জুনে প্রাথমিকভাবে তিন বছর মেয়াদে অভিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০২০ সালের জুনে তাঁর মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানো হয়। বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার হিসেবে তিনি যেকোনো সরকার কিংবা সংস্থা থেকে স্বাধীন এবং নিজের সক্ষমতার ভেতরে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চিলির সান্তিয়াগোয় দিয়েগো পোর্টালস ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ের অধ্যাপক। পাশাপাশি তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বিষয়ের মাস্টার্স প্রোগ্রামের পরিচালক।

বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার হলো মানবাধিকার পরিষদের একটি অংশ। স্পেশাল প্রসিডিউরস হলো মানবাধিকার পরিষদের স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান ও পর্যবেক্ষন ব্যবস্থার সাধারণ নাম। এটি জাতিসংঘ মানবাধিকার ব্যবস্থায় স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত বৃহত্তম অংশ। এটি বিশেষ কোনো দেশের পরিস্থিতি কিংবা বিশ্বজুড়ে বিষয়ভিত্তিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে। স্পেশাল প্রসিডিউরসের বিশেষজ্ঞরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করেন। তারা জাতিসংঘের কর্মী নন এবং কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিকও পান না। তারা যেকোনো সরকার বা সংস্থা থেকে স্বাধীন এবং ব্যক্তিগত সক্ষমতার ভেতরে থেকে দায়িত্ব পালন করেন।

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার কান্ট্রি পেইজ: বাংলাদেশ

আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ: জোলেন তাউতাকিতাকি Ms. Jolene Tautakitaki (jolene.tautakitaki@un.org) অথবা ইমেইল করুন: hrc-sr-migrant@un.org

 

জাতিসংঘের অন্যান্য স্বাধীন বিশেষজ্ঞের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে যোগাযোগ করুন: মায়া দেরৌয়াজ (maya.derouaz@un.org) অথবা দারিশা ইন্দ্রগুপ্ত (dharisha.indraguptha@un.org)

 

জাতিসংঘ স্বাধীন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের সংবাদ বিষয়ে জানতে টুইটারে চোখ রাখুন: @UN_SPExperts.

 

                                                                                                                                                                 

আমাদের এই বিশ্বটা নিয়ে আপনি কি সচেতন?

অন্যের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজই সোচ্চার হোন

#Standup4humanrights

এবং ভিজি করুন: http://www.standup4humanrights.org

 

         

 

এই উদ্যোগে জাতিসংঘের যে সকল সংস্থা যুক্ত

ওএইচসিআর
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়

এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা যে টেকসই লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিচ্ছি