জাতিসংঘ মহাসচিবের এসডিজি দূত মহামান্য রানীর বাংলাদেশ সফর সমাপ্ত
০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
জাতিসংঘ মহাসচিব এর টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) দূত বেলজিয়ামের মহামান্য রাণী তার তিন দিনের বাংলাদেশ সফরের শেষ দিনে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা জেলা পরিদর্শন করেন।
তাঁর সফরকালে তিনি জলবায়ু বিষয়ক কর্মসূচি, জেন্ডার সমতা, শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পণ্যের দায়িত্বশীল ব্যবহার ও উৎপাদন, গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়সহ কতগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক জাতিসংঘের কর্মসূচিভিত্তিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
মহামান্যের সফর দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব তুলে ধরেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর পরবর্তী সময়, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপট এবং ভয়াবহ বন্যা যেটা গত বছরের জুনে এদেশে আঘাত হেনেছিল, এই সফরটি এদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোকে অভিঘাত সহনশীল হতে এবং কাউকে পিছিয়ে না রাখার ক্ষেত্রে এসডিজি এর গুরুত্বের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, গোয়েন লুইস তার এক বিবৃতিতে মহামান্য রানির সফরের প্রশংসা উল্লেখ করে বলেন, "এসডিজির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ওপর পুনরায় আলোকপাত করা প্রয়োজন।" তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ এবং আমাদের অংশীদারগণ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যেতে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে কোনো প্রচেষ্টাই বাদ দিবে না।"
মহামান্য রানী নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তার সফর শুরু করেছিলেন। যেখানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) নারী শ্রমিকদের নিয়ে জেন্ডার সমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। পরবর্তীতে তিনি জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এর সহায়তায় ঢাকায় একটি সামর্থ্য ভিত্তিক দ্রুত শিখন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন যা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশে তাঁর তিন দিনব্যাপী সফরের শেষ দিনে বেলজিয়ামের মহামান্য রানী সুতারখালি ইউনিয়ন এলাকায় পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার এর উদ্যোগে পরিচালিত একটি প্রকল্প এলাকায় গমন করেন, উক্ত এলাকাটি ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত এবং লবণাক্ততা অনুপ্রবেশের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে কথা বলেন এবং উক্ত এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখতে পান। সুতারখালি ইউনিয়নে স্থাপিত পানি পরিশোধন প্ল্যান্টটি উক্ত এলাকায় বসবাসরত ৪০০ পরিবারের ১৬০০ লোকের জন্য পরিষ্কার পানি সরবরাহ করে। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং জাতিসংঘ মূলধন উন্নয়ন তহবিল (ইউএনসিডিএফ) এর সহায়তায় প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক স্থানীয় সরকার উদ্যোগের আওতায় ২০২০ সালে উদ্বোধন করে। মহামান্য রানী সুতারখালি ইউনিয়নের স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে মহামান্য রানী বাসিন্দাদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
তারপর তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখার জন্য নৌকায় করে ঝুলন্ত পাড়ায় গমন করেন এবং এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে ওঠার সংগ্রামে রত স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে কথা বলেন। সুরখালি ও শিবসা নদী এলাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত ঝুলন্ত পাড়া প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান হারে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে।
মহামান্য রানী তার এই সফরে কক্সবাজার জেলাতেও গমন করেন এবং সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চলমান মানবিক সাড়াপ্রদান কার্যক্রম দেখেন। তিনি রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ ও তরুণ, এবং শরণার্থী ক্যাম্পে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের সাথেও সাক্ষাত করেন। তাছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্হা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘের অন্যান্য শরণার্থী সংস্হা এবং এর অংশীদারগণ কতৃর্ক আয়োজিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গুলোও পরিদর্শন করেন।
মহামান্য রানী মাথিলদা
মহামান্য রানী মাথিলদা ২০১৩ সালে রাজসিংহাসনে বসেন। তিনি একই সাথে গুম ও যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের ফাউন্ডেশন "চাইল্ড ফোকাস" এবং ইউনিসেফ বেলজিয়ামের অনারারি প্রেসিডেন্ট। ঝুঁকিগ্রস্থ মানুষের সেবায় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০১ সালে রানী মাথিলদা "প্রিন্সেস মাথিলদা তহবিল" (বর্তমানে "রাণী মাথিলদা তহবিল") গঠন করেন। এসডিজি অর্জনে সহায়তাকারী হিসেবে তিনি বিশেষভাবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করেন।