প্রেস রিলিজ

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে করণীয় কী?

১০ মে ২০২৩

প্রতিরোধ কর্মসূচি থেকে অর্জিত জ্ঞান সবার সামনে তুলে ধরলো ইউএন উইমেন বাংলাদেশ

ইউএন উইমেন বাংলাদেশ আজ (১০ মে, ২০২৩) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) একটি লার্নিং শেয়ারিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যেখানে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ (কমব্যাটিং জেন্ডার-বেইজড ভায়োলেন্স- সিজিবিভি) প্রকল্পের সফলতা সবার সামনে তুলে ধরা হয়। কানাডা সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করা। রিসার্চ, মনিটরিং, ইম্প্যাক্ট ইভ্যালুয়েশন ও ইনোভেটিভ  পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এই প্রকল্পের অধীনে প্রাতিষ্ঠানিক ও আচরনগত পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, যা সহিংসতামুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, প্রায় ৭৩ কোটি ৬০ লাখ (৭৩৬ মিলিয়ন) নারী, অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী জীবনে কমপক্ষে একবার হলেও শারীরিকভাবে  ইন্টিমেট পার্টনার অথবা নন-পার্টনার এমন কারও কাছ থেকে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নারী তাদের পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

প্রিভেনশন প্রোগ্রামিং -এর কার্যকারিতাকে মাথায় রেখে, ইউএন উইমেন ২০১৮ সাল থেকে সিজিবিভি প্রকল্পটি পরিচালনা করে আসছে, যা লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার মোকাবেলায় প্রতিরোধের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। অনুষ্ঠানে প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর শ্রবনা দত্ত এই প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি এই প্রকল্পের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২ কে উল্লেখ করেন। ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় সুশীল সমাজ, নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন অ্যাক্টিভিস্ট  এবং দ্য রেইপ ল’ রিফর্ম কোয়ালিশনের ৪ বছর মেয়াদি অ্যাডভোকেসির  মাধ্যমে এই আইনে সংশোধনী নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। যার ফলে, এখন থেকে আদালতে ধর্ষনের মামলায়  ভুক্তভোগীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না ও আদালতে এ সংক্রান্ত ডিজিটাল প্রমাণ উপস্থাপন করার সুযোগ থাকবে।

৫ বছরের বেশি সময় ধরে সিজিবিভি প্রকল্পটি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও বৈষম্যমূলক আচরনের  পরিবর্তন ঘটাতে পরিবার, কমিউনিটি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কাজ করেছে। এই প্রকল্পে কমিউনিটি মোবিলাইজেশন অ্যাপ্রোচ ‘সাসা! টুগেদার’ ও পরিবারভিত্তিক প্রতিরোধের উপায় ‘সম্মান ও সমতার জীবন’ সহ বৈশ্বিকভাবে সমাদৃত বিভিন্ন প্রতিরোধ মডেল প্রয়োগ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান। তিনি বলেন, “পুরুষদের যতো বেশি আমরা এ ধরনের প্রোগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত করবো, সমতা অর্জন ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হ্রাস করা আমাদের জন্য ততো বেশি সহজ হবে।”তিনি আরও বলেন, “সরকার, অলাভজনক সংস্থা এবং সুশীল সমাজ সংশ্লিষ্ট সংস্থা -আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে চাই। নারীর প্রতি সহিংসতা হ্রাসে আমরা সবাইকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে প্রত্যাশী।”

২০০৯ সালে আদালত সরকারি ও বেসরকারি কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে জিরো-টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে কিছু নির্দেশনা প্রদান করে। অনুষ্ঠানে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সিজিবিভি প্রকল্প থেকে গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। যেমন- ১২টি সরকারি ও বেসরকারি কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে জিরো-টলারেন্স নীতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ নিরসন কমিটি (কমপ্লেইন্ট কমিটি) প্রতিষ্ঠা ও কমপ্লায়েন্সের জন্য অতিরিক্ত ৭৮টি কমিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস। ইউএন উইমেনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এত অল্প সময়ে সাফল্য অর্জনের বিবেচনায় প্রোগ্রামটি আসাধারণ। আমাদের সামগ্রিকভাবে একসাথে কাজ করতে হবে। একসাথে কাজ করার পদ্ধতি হবে ইন্টারসেকশনাল। এর অর্থ হল পরিবর্তন আনতে আমাদের সকল লিঙ্গ ও বিশ্বাসের মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষ অতিথি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সুলতানা কামাল বলেন, “আমাদের মানবতা ও বিশ্বাসের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি তা করতে পারি, তবেই সংখ্যাগতভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা আমরা কমিয়ে আনতে পারবো”

ইউএন উইমেন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, “প্রতিরোধ কর্মসূচি কার্যকর ফলাফল দেয়। এই ধরণের কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। এই পরিবর্তন ত্বরান্বিত করতে একযোগে কাজ করার এখনই সময়।”

তিনি বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভরশীল প্রতিরোধ কর্মসূচির কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে জানান, আফ্রিকা ও এশিয়ার ১২টি দেশে ইউকে এইডের সহায়তায় পরিচালিত ‘হোয়াট ওয়ার্কস টু প্রিভেন্ট ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন অ্যান্ড গার্লস’ শীর্ষক প্রোগ্রাম থেকে দেখা যায়, প্রতিরোধ কার্যক্রমের সাহায্যে নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতার হার কমিয়ে আনা যায়।

ইউএন উইমেন এশিয়া ও প্যাসিফিকের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট মেলিসা আলভারাডো বলেন, “এ প্রোগ্রাম প্রিভেনশন প্রোগ্রামিং এ বেশ কিছু এভিডেন্স তৈরি করতে পেরেছে, যা নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে লিঙ্গ সমতা অর্জনের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারি না, আমাদেরই এ দায়িত্ব নেয়া উচিত। এ নিয়ে আমাদের এখনই কাজ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সিজিবিভি প্রকল্প চলাকালীন অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। এসময় তৃণমূল থেকে আগত অংশগ্রহণকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এর পেছনের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস। এছাড়া, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান; ইউএন উইমেন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলী সিং; ইউএন উইমেনের এন্ডিং ভায়োলেন্স এগেনস্ট উইমেন বিশেষজ্ঞ মেলিসা আলভারাদো, ব্যারিষ্টার সারা হোসেইন সহ বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় বাস্তবায়নকারী ও তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।

এই উদ্যোগে জাতিসংঘের যে সকল সংস্থা যুক্ত

ইউএন উইমেন
জাতিসংঘ জেন্ডার-সমতা ও নারী ক্ষমতায়ন সত্তা

এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা যে টেকসই লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিচ্ছি