বাংলাদেশে জাতিসংঘ চট্টগ্রামের বন্যা কবলিত এলাকায় সিইআরএফের অর্থায়নে কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে
০৯ অক্টোবর ২০২৩
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, জাতিসংঘ সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড (সিইআরএফ) থেকে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার তহবিল পেয়েছে। এই তহবিল ব্যবহার করে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগে, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, জীবনরক্ষাকারী কার্যক্রম জোরদার করা শুরু করেছে। এই প্রচেষ্টাতে আকস্মিক বন্যার ফলস্বরুপ চট্টগ্রাম বিভাগের দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী নারী ও কিশোরীসহ ১ লাখেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা প্রদান করবে।
সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগে আকস্মিক বন্যায় ১৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬ লাখ মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন। ২ লাখ ১২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দেশের সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে তাদের মানবিক চাহিদা আরও জটিল হয়েছে।
সিইআরএফের অর্থায়ন করা কার্যক্রম বাস্তবায়নকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, “চট্টগ্রাম বিভাগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানে তহবিল বরাদ্দ করতে দ্রুত সাড়া দেওয়ায়, ইমার্জেন্সি রিলিফ কোঅর্ডিনেটরের প্রতি্ বাংলাদেশে জাতিসংঘ অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ সরকার, বেসরকারি সংস্থাসমূহ ও মানবিক অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে, সিইআরএফ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুত জোরদার করতে এবং অরক্ষিত কমিউনিটিদের জরুরী চাহিদা পূরণ করতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে সহায়তা করবে।’’
সিইআরএফের রেপিড রেসপন্স শাখার দেওয়া তহবিলের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে জাতিসংঘের চারটি সংস্থা– খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যা কবলিত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান জেলায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এফএও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অরক্ষিত কমিউনিটির মানুষের জীবিকা সুরক্ষিত রাখার জন্য, শস্য উৎপাদন পুনরায় শুরু করতে ও তাদের সক্ষম করে তোলার মাধ্যমে, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি সহায়তা প্রদান করবে। সংস্থাটির প্রকল্পটি জরুরি শস্য উৎপাদন প্যাকেজের মাধ্যমে পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদান করবে। ওই প্যাকেজে থাকে ধান ও সবজি বীজ, সার এবং কৃষি উপকরণ। এই প্রকল্পের লক্ষ্য সেই সব কমিউনিটি, যেগুলো প্রাথমিকভাবে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং বন্যার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউএনএফপিএ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্তঃসত্ত্বা নারী, কিশোরী ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিবে, যাতে তাদের জীবন রক্ষাকারী যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য (এসআরএইচ) সেবা ও তথ্য প্রাপ্তি এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার (জিবিভি) ঝুঁকি থেকে তাদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। ইউএনএফপিএর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেঃ মাতৃত্বকালীন যত্ন, পরিবার পরিকল্পনা ও জরুরি পরামর্শ সেবা প্রদানের জন্য ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প পরিচালনা; সুরক্ষাজনিত ঝুঁকি কমানো; ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর এসআরএইচ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, সেবা প্রাপ্তির সুবিধার্থে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান; ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা; ঋতুস্রাবজনিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা; মা ও নবজাতকদের সুরক্ষার জন্য জরুরি উপকরণ বিতরণ; এবং মনো-সামাজিক সহায়তাসহ নারী নির্যাতনের শিকার মানুষদের সহায়তা প্রদান করা।
ইউনিসেফ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে জীবনরক্ষাকারী পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) সহায়তা প্রদান করছে। ইউনিসেফের এই প্রকল্প পরিবারগুলোকে তাদের ঘরোয়া চাহিদা মেটাতে এবং নিরাপদে ব্যবস্থা করা স্যানিটেশন সেবা প্রাপ্তির জন্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ পানি সরবরাহ করবে । জলবায়ু সহনশীল পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে এটি অর্জন করা হবে, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমাবে। প্রকল্পটি কমিউনিটিগুলোর সহনশীলতাকে শক্তিশালী করা এবং মানবিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে সংযুক্ত করার পাশাপাশি, অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর সম্মানজনক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবে, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের।
ডব্লিউএফপি মারাত্মক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে তাদের মৌলিক খাদ্য, পুষ্টি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে সহায়তা করার জন্য খাদ্য ও নগদ অর্থ প্রদান করবে। জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের মোকাবেলায় সহনশীলতা গড়ে তুলতে, সংস্থাটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার দেবে, যারা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসজনিত প্রভাবের কারণে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে রয়েছে।
সিইআরএফ হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে দাতারা তাদের আবেদন আগে থেকেই জমা করেন। এই তহবিল মানবিক সংস্থাগুলোকে, যখন, যেখানেই সংকট দেখা দে্য় সেখানেই প্রারম্ভিক পর্যায়ের ও জীব রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এই সময়ে ওই সংস্থাগুলোর অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন হয় ।
আরও তথ্যের জন্য সিইআরএফের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। অর্থায়ন সম্পর্কিত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য পেতে ভিজিট করুন ওসিএইচএ ফিন্যান্সিয়াল ট্র্যাকি সার্ভিস।