জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি
জ্যেষ্ঠ সচিব ও সরকারি কর্মকর্তারা,
উপস্থিত মহামান্য ও আমাদের অংশীদারগণ,
সম্মানিত অতিথি,
শুভ বিকেল।
জাতিসংঘ দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত জাতিসংঘ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
এই উদ্যোগ সফলভাবে আয়োজনের জন্য আমি ইউএন কান্ট্রি টিম, বিভিন্ন সংস্থা এবং জাতিসংঘ কমিউনিকেশন্স গ্রুপে আমার সহকর্মীদের অভিবাদন জানাই।
জাতিসংঘ দিবসে আমরা আজ থেকে ৭৮ বছর আগে জাতিসংঘ সনদ বাস্তবায়নকে উদযাপন করি। এটি একটি অসাধারণ অর্জন। এটি আসার পর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে শক্তিমত্তা আর নিয়ামক হিসেবে রইল না - জাতিসংঘ সনদের কল্যাণে আইনের ভিত্তিতে একটি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হয়, যার মাধ্যমে শান্তি, সংহতি ও সামগ্রিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।
আমাদের অনেক ঘাটতি এবং ব্যর্থতা রয়েছে। এসবের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম - চরম দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস, অনেক রোগ-ব্যাধী নির্মুল এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বন্ধন সৃষ্টি, যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
আমরা যেহেতু এ বছর সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করছি। কাজেই আমাদের অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে এই সনদ ছাড়া মানবতা বাস্তবায়িত হওয়া প্রায় অসম্ভব।
উন্নয়ন ছাড়া যেমন শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, একইভাবে শান্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। এগুলোর কোনোটিই অর্জন সম্ভব নয়, যদি না আমরা মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি।
আমাদের এই বিশ্বে যেহেতু ক্রমেই বহুমাত্রিক মেরুকরণ ঘটছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা মহামারির মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা দিন দিন কঠিনতর হয়ে উঠছে, কাজেই আমাদের সংস্কার প্রয়োজন।
এতে যেমন আজকের ক্ষমতাবিন্যাস স্পষ্ট হবে, পাশাপাশি সংহতি, সহযোগিতা এবং আইনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলায় আস্থা জোরদার হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিনব অর্থায়ন ব্যবস্থা কিংবা আঞ্চলিক পর্যায়ে অভিযোজন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগগুলো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে জাতিসংঘ টিম। আমাদের প্রত্যাশা, দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় কপ-২৮ সম্মেলনের পরপরই একধরনের গতি অর্জন করবে এসব উদ্যোগ।
উপস্থিত ভদ্রমহিলা ও মহোদয়। এ বছর আমরা কেবল জাতিসংঘ সনদের ৭৮তম বার্ষিকীই উদযাপন করছি না, পাশাপাশি ২০৩০ অ্যাজেন্ডার পথে কাঙ্ক্ষিত অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী সময়েও উপনীত হয়েছি। বৈশ্বিকভাবে আমাদের অভীষ্টের ১৫ শতাংশেরও কম ঠিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের বহু আগে বাংলাদেশ মানব উন্নয়নের গুরুত্ব অনুধাবন করেছিল এবং ঈর্ষনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জেন্ডারসমতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
তবে একাধিক সংকটের কারণে টেকসই উন্নয়নের কিছু অভীষ্ট অর্জনের গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি।
এ জন্য আমাদের যৌথ উদ্যোগ অব্যাহত থাকা প্রয়োজন।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ এবং এর কারণে উন্নয়ন সহযোগিতায় যে পরিবর্তন আসতে চলেছে, তা বিবেচনায় জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাবে, যা হবে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং দেশের ভেতর উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় যথোপযুক্ত।
কাঠামোগত পরিবর্তন, যা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নীতি পরিকাঠামোর মাধ্যমে অন্তর্ভূক্তিমূলক, পুনরুদ্ধারমূলক অর্থনীতি ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ প্রসারিত করে, তাকে সমর্থন দিয়ে যাবে জাতিসংঘ।
পাশাপাশি সব খাতে উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়, বহুমাত্রিক ঝুঁকি হ্রাস এবং জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নিশ্চিতে ঝুঁকির তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা জোরদারে সরকারের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
কর্মক্ষেত্রের প্রতিটা স্তরে সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, জেন্ডারসমতা প্রতিষ্ঠা এবং লিঙ্গ পরিচয়জনিত সহিংতা নির্মুলে বাংলাদেশে জাতিসংঘ টিম দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও কন্যাশিশুর অধিকারের পথে কাঠামোগত বাধাগুলো চিহ্নিত করতেও আমরা কাজ করে চলেছি।
টেকসেই উন্নয়নের ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর ১৭টি অভীষ্টের লক্ষ্য হলো, কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না এবং এসব অভীষ্টকে বাস্তব রূপ দিতে আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করে যাব।
বহুপাক্ষিকতা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জাতিসংঘের প্রতি অবিচল থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমি বিশেষভাবে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিতে চাই শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে উদারতা দেখানো এবং বহুপাক্ষিতায় আপনাদের সমর্থনের জন্য।
পরিশেষে আমি জাতিসংঘে আমার সহকর্মীদের ধন্যবাদ দিতে চাই। বাংলাদেশের জনগণের জন্য আপনারা কঠিন সময়েও যে অসাধারণ কাজ করে চলেছেন, তার জন্য আপনাদের অভিবাদন। আপনাদের মূল্যবোধ, আপনাদের সহনশীলতা কেবল আমাদের কাজকেই এগিয়ে নিয়ে যায় না, আমরা যে সমাজকে সেবা দেই, তাদের জন্যও আশার আলো হয়ে জ্বলে।
বিগত এক বছরে জাতিসংঘে আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের স্মরণ করতে চাই আমরা।
অতি সম্প্রতি, গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মানবিক সহায়তা দিতে গিয়ে আমাদের ৫৩ জন সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন। আমরা তাঁদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, পূর্ণ মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর এবং একটি রাজনৈতিক সমাধানের যে আহ্বান, সবাই যেন তা মেনে নেন, সে প্রত্যাশা করছি।
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ, এজেন্ডা ২০৩০ অর্জনে নির্ধারিত সময়ের দ্বিতীয় ধাপে যেহেতু আমাদের যাত্রা শুরু হচ্ছে, কাজেই আসুন আজকের দিনটাকে আমরা কৌশল পুনর্নির্ধারন এবং জাতিসংঘ সনদের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করি।
আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ জাতিসংঘ দিবস।