হিউম্যানিটেরিয়ান কোঅর্ডিনেশন টাস্ক টিম (এইচসিটিটি)-এর ২০২২ বন্যার প্রেক্ষাপটে মানবিক সাড়াপ্রদান পরিকল্পনা
ভারী মৌসুমি বর্ষণ ও উজানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আসা ঢলে সিলেট বিভাগের বড় এলাকা প্লাবিত হয়, পানিবন্দী হয়ে পড়ে লাখো মানুষ। এতে এক মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়। বন্যায় বাড়িঘর ভেসে যায়, জলমগ্ন হয়ে পড়ে কৃষিজমি, মানুষ বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ফেলে উঁচু জায়গায় ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যার চেয়ে এবারের বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ। এই সংকট এমন এক সময় দেখা দিয়েছে যখন সিলেট বিভাগের বাসিন্দারা সাম্প্রতিক আরেকটি বন্যা থেকে সবে পুনরুদ্ধার শুরু করেছিল। ওই বন্যা আঘাত হেনেছিল মে মাসের শেষদিকে। ওই বন্যায় প্রায় ৭২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নয়টি জেলা - সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও শেরপুর প্লাবিত হয়েছিল। ওই নয়টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ জেলা হলো - সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ (এমওডিআমআর) মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে সে সময় ১ হাজার ৬০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। বন্যাকবলিত হয়ে অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, অনেকে আবার খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ওই সব পরিবারের নারী ও মেয়েশিশুদের নিরাপত্তা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, নয় জেলায় বন্যাকবলিত হয়েছে প্রায় ৭২ লাখ মানুষ। জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) তথ্য মতে, ৪৪ হাজার ২৫৪টি নিরাপদ পানির ব্যবস্থা এবং ৪৯ হাজার ৮৮৫টি শৌচাগার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৪টি গবাদিপশু বন্যাকবলিত হয়েছে। এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৫১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের সঙ্গে হিউম্যানিটেরিয়ান কোঅর্ডিনেশন টাস্ক টিম যৌথভাবে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছে। পাশাপাশি ২০২২ সালের এই বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূরক সাড়াদান পরিকল্পনা প্রণয়নে জেন্ডারভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করে একটি বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের জন্য প্রণীত হয়েছে এই পরিকল্পনা এবং এতে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি, আশ্রয়ন, পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ডব্লিউএএসএইচ) ও সমন্বিত জিবিভি(ইন্টিগ্রেটেড জিবিভি) এবং যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য (এসআরএইচ)সহ অগ্রাধিকার খাতগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোট ৫ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। ২০২২ সালের ২৭ জুন এইচসিটিটি বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) এইচসিটিটি সাড়াদান পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সরকারের সাড়াদান কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। মানবিক সাড়াপ্রদান পরিকল্পনা (এইচআরপি) সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ জেলা - সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অগ্রাধিকার পাওয়া ভৌগলিক এলাকাগুলোর ক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও তা মোকাবেলার সক্ষমতার ঘাটতির নিরিখে। মানবিক সহায়তা দানকারী সম্প্রদায় ইন্টার-এজেন্সি স্ট্যাডিং কমিটি(আইএএসসি ) কালেক্টিভ একাউন্টিবিলিটি টু এফেকটেড পপুলেশন (এএপি) ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে এই সাড়াপ্রদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।