স্থানীয় পর্যায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকল্পে এলজিডি, ইইউ, ইউএনডিপি’র যৌথ উদ্যোগে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ-এর তৃতীয় ধাপের যাত্রা শুরু
তৃণমূল ন্যায়বিচারকে শক্তিশালী করা: সারা বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সম্প্রসারণ ও ক্ষমতায়নের জন্য একটি সহযোগিতামূলক উদ্যোগ
১২ অক্টোবর, রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এর যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (৩য় পর্যায়)’ প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে জরুরি গ্রাম আদালত ব্যবস্থার ক্ষমতায়ন ও সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইইউ রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার
অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় মাননীয় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম তৃণমূল পর্যায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের অঙ্গীকার পুন:ব্যক্ত করে বলেন, “আমাদের সরকার মামলা-মোকদ্দমা হ্রাসে সহায়তা করতে এবং গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রয়োজনীয় সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ এবং সবার জন্য উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে জনমুখী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেও আমাদের সরকার কাজ করে চলেছে।”
ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি গ্রামীণ এলাকায় সহজলভ্য এবং দক্ষ ন্যায়বিচারের জন্য গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে একটি জরুরি অবলম্বন হিসাবে এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তারঁ মতে দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে আইনি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। আনুষ্ঠানিক আদালত ব্যবস্থায় মামলার জট কমিয়ে আনতে বিচার ব্যবস্থার সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন বলে জোর দেন তিনি।
প্রথম দুই ধাপের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (পর্যায় ৩)’ প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। প্রকল্পটি গ্রহণের সময় পুরো বাংলাদেশে গ্রাম আদালত পরিষেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথাও বিবেচনা করা হয়েছে। ইইউ এবং ইউএনডিপি’র সাথে বাংলাদেশ সরকারের অংশীদারিত্বে পরিচালিত এ প্রকল্পে সরকারের পক্ষ থেকে তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রমাণ করে সুলভ ন্যায়বিচারের প্রাপ্তির চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের লক্ষ্য হচ্ছে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় অংশীজনদের ভূমিকা বিবেচনায় রেখে টেকসই গ্রাম আদালত ব্যবস্থা তৈরি করা। নতুন উদ্যোগগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্রাম আদালতের মামলাগুলির জন্য মনিটরিং এবং রিপোর্টিং ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন। এই উদ্ভাবনটি তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য হালনাগাদকে সম্ভব করবে এবং স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অংশীজনের জন্য যার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে। আর এর মধ্য দিয়ে অধিকতর ভাল পরিষেবা তত্ত্বাবধান এবং মামলার অগ্রগতি অনুসরণ (ট্র্যাকিং) নিশ্চিত করা যাবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, “ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সকলের ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্নে ইউএনডিপি’র অঙ্গিকার আজ বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাপ্যতার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা না গেলে টেকসই উন্নয়ন অর্জন এবং সকলের জন্য বৈষম্যহীন অধিকার নিশ্চিত করে—এমন একটি বিশ্ব গড়ে তোলা কখনোই সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে সহজলভ্য করতে ২০০৯ সালে থেকেই আমাদের যৌথ প্রয়াস জারি আছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির বিকল্প উপায় হিসেবে এবং ন্যায়বিচারের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ এর পাইলট পর্যায়টির কার্যক্রম চালু হয়।
স্টেফান আরো বলেন, “প্রাথমিক সাফল্যের কারণেই এটিকে সম্প্রসারণ করার দাবি উঠে, এবং ২০১৬ সালে এর দ্বিতীয় পর্যায়ের যাত্রা শুরু হয়। আজ, এ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায় চালু করার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সংকল্পই পুন:ব্যাক্ত করছি। আমাদের লক্ষ্য হল সারা বাংলাদেশে ৪,৪৫৭ টি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত সক্রিয় করা এবং সেগুলোর কার্যক্রম অব্যহত রাখে, যাতে করে প্রান্তিক জনগণের কণ্ঠস্বর কেবল শোনা-ই যাবে না, বরং সমাজের কোনে কোনে সেই কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিতও হবে।”
আদালতের ব্যয় হ্রাস এবং ইউনিয়ন পরিষদকে সক্রিয় সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার পাশাপাশি নাজুক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (৩য় পর্যায়)’ প্রকল্পটি একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, এলজিডি’র সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এলজিডি’র যুগ্ম সচিব এবং জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী, এবং জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী বিভাস চক্রবর্তী। এলজিডি’র যুগ্ম সচিব ফারজানা মান্নান মুক্ত আলোচনা সেশনটি সঞ্চালনা করেন।