খেলাধুলা এবং জীবনে মেয়ে ও ছেলেদের সমান সুযোগের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করতে বিশ্বকাপ চলাকালে ইউনিসেফ ও আইসিসির অংশীদারিত্ব
৩ নভেম্বর ২০২৩
আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটাররা মেয়েদের অ
নয়াদিল্লি, ৩ নভেম্বর ২০২৩: মেয়ে ও ছেলেদের সমান অধিকার ও সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল আজ আহমেদাবাদে ৫০ জন শিশুর সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছে।
ইউনিসেফ ও আইসিসির মধ্যে এক গ্লোবাল পার্টনারশীপের (বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের) আওতায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘ক্রিকেট ক্লিনিক’ অনুষ্ঠিত হয় । এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০২৩ এ অংশগ্রহণকারী মোট দশটি দলের প্রত্যেকে একটি করে ‘ক্রিকেট ক্লিনিক’ বা সেশনে অংশগ্রহন করেন।
ইংল্যান্ডের সঙ্গে হওয়া সেশনটির মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত দশ-পর্বের এই ‘ক্রিকেট ক্লিনিক’ এর সমাপ্তি ঘটে।
আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডস এর ক্রিকেট দলের প্রত্যেকে আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, ধর্মশালা, কলকাতা, লখনউ, মুম্বাই, নয়াদিল্লি ও পুনের স্টেডিয়ামে ১০ই অক্টোবর থেকে ৩ রা নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৫০ জন ছোট ছোট ছেলে ও মেয়েদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। এসব ক্রিকেট সেশনে, প্রতিটি দল খেলার মধ্য দিয়ে শিশুদের, বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের, বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেয়।
ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা বলেন, “ক্রিকেট লাখ লাখ মানুষকে আন্দোলিত করতে এবং মেয়ে ও ছেলেদের অনুপ্রাণিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আমরা মনে করেছি, মেয়ে ও ছেলে উভয়ের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপকে কাজে লাগানো একটি সময়োপযোগী ও কার্যকরী উদ্যোগ হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী মেয়েদের জন্য জীবন সবসময় সহজ নয়। বিশ্বজুড়ে যত কিশোরী রয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশ বাস করে এই অঞ্চলে। তবে তারা জীবনের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। প্রতিটি মেয়ের জন্য এই ক্রিকেট সেশন একটি দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরি করবে, যা তাদেরকে সব ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।”
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি পাঁচ জন মেয়ের মধ্যে একজন অপুষ্টির শিকার। অর্ধেকেরও বেশি কিশোরী রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। মাত্র ৩৬ শতাংশ মেয়ে মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছে। এবিশ্বে যত শিশুবধূ রয়েছে তার প্রায় অর্ধেকের বসবাস এই দক্ষিণ এশিয়ায়।
এই ক্রিকেট সেশনগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন এর মাধ্যমে অল্পবয়সী মেয়ে ও ছেলেরা বিভিন্ন ধরণের দক্ষতা শেখার মাধ্যমে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে, তাদের মাঝে মিলেমিশে কাজ করার মনোভাব তৈরী হয়, এবং নেতা হয়ে গড়ে ওঠার গুনাবলী অর্জন করতে পারে। প্রিয়াঙ্কা ও শবনম নামে দুটি মেয়ে গত ১৩ই অক্টোবর নয়াদিল্লিতে অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের সঙ্গে ক্রিকেট সেশনে যোগ দেয়।
প্রিয়াঙ্কা বলে, “আমরা পুরো দলের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি। সবাই খুব আন্তরিক ছিল। আমরা ধরে নিয়েছিলাম তারা বেশ কঠোর হবে। সবমিলিয়ে, এটি একটি দারুণ অনুভূতি ছিল।”
শবনম বলে, “আজ এখানে উপস্থিত থাকা এবং দলটির সঙ্গে দেখা হওয়া আমার জন্য দারুণ একটি অভিজ্ঞতা। তারা আমাদের খেলার জন্য সঠিক পজিশন এবং কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছে। আমি সত্যিই এটি উপভোগ করেছি।”
আরেক অংশগ্রহণকারী বিকাশ বলে, “এখানে আসা এবং রশিদ খানের সঙ্গে দেখা করাটা ছিল দারুণ ব্যাপার। আমি আগে তাকে শুধু টেলিভিশনে দেখেছি, কিন্তু আজকে আমি প্রথমবারের মতো তার এবং তার দলের খেলোয়ারদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার সুযোগ পেয়েছি।”
শিশুদের উদ্দেশ্যে আফগানিস্তানের বোলার নাভিন-উল-হক বলেন, “চ্যাম্পিয়ন হও, ক্রিকেট খেলো। তুমি ছেলে না মেয়ে সেটি কোন বিষয় নয়।”
১৮ ই অক্টোবর ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে তারকা উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বে পাকিস্তান ক্রিকেট দল ৫০ জন শিশুর সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। পাকিস্তান দলে আরও ছিলেন ইফতিখার আহমেদ, হাসান আলী, উসামা মীর, হারিস রউফ ও আগা সালমান
গত ১৯ শে অক্টোবর শিশুদের জন্য ছিল একটি রোমাঞ্চকর দিন। সেদিন তারা বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে বেঙ্গালুরুতে আসা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন দলটিতে আরও ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার, মারনাস ল্যাবুশেন, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ট্র্যাভিস হেড, ক্যামেরন গ্রিন, মার্কাস স্টয়নিস, জশ হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্ক ও দলের সাপোর্ট স্টাফরা । শিশুরা তাদের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলে, ঠাট্টা করে, হাসাহাসি করে এবং ক্রিকেটের পাশাপাশি দল গঠন ও নেতৃত্বের মতো জীবনের পাঠ শেখে। তারা ক্রিকেটারদের বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে, ক্রিকেটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের উত্তর দিয়েছে, এবং তাদের কাছ থেকে টি-শার্ট এবং ক্যাপে অটোগ্রাফ পেয়েছে; এমনকি ইউনিসেফ অস্ট্রেলিয়ার দূত প্যাট কামিন্সের সঙ্গে জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থেকে বাঁচতে ও সফল হতে কী লাগে সে সম্পর্কে একটি ‘পেপ টক’-এও অংশ নেয়।
ইউনিসেফের ‘নিজে করার মাধ্যমে শেখা’ কর্মসূচি কীভাবে কমিউনিটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা দেখতে প্যাট কামিন্স ভারতের লখনউতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনও করেন। কর্মসূচিটি শিশুদের সোলার কুকার তৈরি করা বা প্লাস্টিকের আবর্জনা খেলনায় পরিণত করার মতো দক্ষতা শেখানোর মাধ্যমে স্কুলে থাকতে উৎসাহিত করে ।
গত ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা তাদের অধিনায়ক সাকিব-আল হাসানের নেতৃত্বে কীভাবে বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং করতে হয় সে সম্পর্কে শিশুদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়।
সংক্ষিপ্ত অনুশীলন সেশনের পরে স্নেহা মণ্ডল বলে, “ছেলেদের সঙ্গে খেলতে পেরে ভালো লেগেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে পেরে আমাকে ছেলেদের সমান মনে হয়েছে।”
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু শুভম রাজওয়ার দোভাষীর সাহায্য নিয়ে জানায়, ম্যাচ চলাকালে একটি দলে কীভাবে খেলতে হয় তা শিখতে এই অনুশীলনটি উপকারী ছিল। সে বলে, “আমি আমার দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ও সিদ্ধান্ত নেবার কৌশল শিখেছি।”
গত ২৮শে অক্টোবর পুনের বিভিন্ন স্কুলের ৫০ জন শিশু পুনের গাহুঞ্জে এমসিএ স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের সঙ্গে একটি ম্যাচ খেলে। আয়োজন শেষে উচ্ছ্বসিত স্বরাঞ্জলি ধাভাদে বলে, এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা। “আমি আজকের আয়োজনটি খুব উপভোগ করেছি। এবারই প্রথমবারের মতো আমি শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করতে ও খেলতে পেরেছি। আমি এর আগ পর্যন্ত তাদের শুধুমাত্র টেলিভিশনেই দেখেছি। তারা আমাদের প্রতিদিন খেলাধুলা ও অনুশীলন করতে উৎসাহ দেয়,” বলে সে।
গত ৩১ অক্টোবর ভারতীয় ক্রিকেট দল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুম্বাইয়ের ভারত স্কাউটস ও গাইডের প্রায় ৫০ জন শিশুর সঙ্গে দেখা করেন।