অভিবাদন।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে এই অভূতপূর্ব সময়ে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা দিবস উদযাপন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের পক্ষে আজ এখানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের দীর্ঘ ইতিহাসের শুরু জাতিসংঘের জন্মের মাত্র তিন বছর পর ১৯৪৮ সালে থেকে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু ১৯৮৮ সালে। সে সময় এ দেশের উর্দি পরা সদস্যদের ইরান ও ইরাকের মধ্যে অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণে মোতায়েন করা হয়েছিল। শান্তিরক্ষা মিশনের এই যাত্রাটা দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল এবং এর জন্য আমরা গর্বিত হতে পারি, এই দীর্ঘযাত্রা থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে প্রাণ দেওয়া বিভিন্ন দেশের ৪ হাজার ৬৫ জন নায়ককে আজ আমরা শ্রদ্ধা জানাই, যাঁদের মধ্যে ১৫৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীও রয়েছেন। ২০২০ সালের মে মাস থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ আটজন নিবেদিতপ্রাণ শান্তিরক্ষী হারিয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠনের দায়িত্ব পালনের সময় ১১ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।
এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথরেখা: দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য তারুণ্যের শক্তিকে জোরদার করা’, যা আমাদের এই সময়ের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে জনসংখ্যার বড় অংশই তরুণ, সেখানে এটি আরও প্রাসঙ্গিক। বিশ্বের তরুণদের প্রায় ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশের, এবং ৩০ শতাংশ ভঙ্গুর ও সংঘাতকবলিত দেশে রয়েছেন।
জাতিসংঘ তারুণ্য, শান্তি ও নিরাপত্তা (ওয়াইপিএস) এজেন্ডা এমন একটি ফ্রেমওয়ার্ক, যা শান্তি, নিরাপত্তা ও সংঘাত মোকাবিলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপের ক্ষেত্রে তরুণেরা যে ইতিবাচক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক ভূমিকা রাখতে পারে, তা স্বীকার করে নিয়েছে। নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডাও একইভাবে শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও শান্তিপ্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেছে।
২০১৫ সালে গৃহীত নিরাপত্তা পরিষদের ২২৫০ নম্বর সিদ্ধান্ত হলো প্রথম কোনো সিদ্ধান্ত, যেখানে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ও এর পক্ষে প্রচেষ্টা চালাতে সর্বস্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তরুণদের প্রতিনিধিত্ব জোরদার করা ও শান্তিপ্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে তরুণ নারী-পুরুষের ইতিবাচক ভূমিকার ওপর পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা ও পুলিশ সদস্য পাঠানো বৃহত্তর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গত ৩৩ বছরে সাহসিকতা, সক্ষমতা, নির্ভরতা, নেতৃত্ব ও পেশাদারত্বের মাধ্যমে অত্যন্ত মর্যাদা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৯ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে মালি, দক্ষিণ সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো কঠিন কিছু জায়গাসহ ১০টি মিশনে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৭৪২ জন শান্তিরক্ষী কাজ করছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের শান্তিরক্ষা এজেন্ডার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এবং নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ নারী শান্তিরক্ষী পাঠাতে শুরু করেছে। আজ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪ জন বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে কাজ করছেন ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী।
এই দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মাহসচিবের বাণী থেকে উদ্ধৃত করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই: ‘আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো আমাদের তরুণ শান্তিরক্ষী, বিশেষত নারী শান্তিরক্ষী, যারা প্রতিদিন গভীরভাবে প্রোথিত জেন্ডার-সংক্রান্ত মনোভাব ভেঙে চলেছেন এবং তরুণ নারী ও কিশোরীদের অপ্রচলিত পথ ও সুযোগ গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।’
আমার কথা শোনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।