জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো (ইউনাইটেড নেশনস সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক - ইউএনএসডিসিএফ ২০২২-২০২৬)
জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২-২০২৬-এর যাত্রা শুরু ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর।
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইউএন কান্ট্রি টিম (ইউএনসিটি) ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২-২০২৬ উদ্বোধন করে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবিলা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অভীষ্টগুলো অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার অর্জন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে এ্জেন্ডা-২০৩০, এসডিজি এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ অর্জনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিতে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামোতে জাতিসংঘ উন্নয়ন সিস্টেমের সামগ্রিক উদ্যোগ প্রতিফলিত হয়েছে।
এটি বাংলাদেশে জাতিসংঘের উন্নয়ন সিস্টেমের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সহযোগিতার ধরনে পরিবর্তন এনেছে এবং এ দেশে সংস্থার সব যৌথ ও একক কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। কোভিড-১৯-এর প্রভাব এবং স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উত্তরণের কারণে উন্নয়ন অর্থায়নে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘ কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্কে বিভিন্ন উপায়ে উন্নয়ন কার্যকারিতার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে।
২০২২-২০২৬ সহযোগিতা কাঠামোতে পাঁচটি আন্তঃসম্পর্কযুক্ত, পারস্পরিকভাবে জোরারোপ করা ও বহুখাতভিত্তিক কৌশলগত অগ্রাধিকার (এসপি) চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে জাতিসংঘ উন্নয়ন সিস্টেম পরিবর্তনমূলক ও টেকসই উন্নয়নকে তরাণ্বিতকরণ প্রক্রিয়ায় বিশেষ সহযোগিতা দেবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে ভূমিকা রাখবে:
- কৌশলগত অগ্রাধিকার ১: অন্তর্ভূক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন
- কৌশলগত অগ্রাধিকার ২: সমতার ভিত্তিতে মানব উন্নয়ন ও কল্যাণ
- কৌশলগত অগ্রাধিকার ৩: টেকসই, সহনশীল ও উপযোগী পরিবেশ
- কৌশলগত অগ্রাধিকার ৪: রূপান্তরমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক সুশাসন
- কৌশলগত অগ্রাধিকার ৫: লিঙ্গ সমতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল
এসব কৌশলগত অগ্রাধিকারের মাধ্যমে অন্তর্ভূক্তিমূলক, সমতার ভিত্তিতে, এবং টেকসই মানব, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়নে তথ্যপ্রমাণভিত্তিক উদ্যোগ তরাণ্বিতকরণে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে জাতিসংঘ সহযোগিতা দেবে। এই কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্কের মূলনীতিতে মানবাধিকার, জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, সহনশীলতা ও জবাবদিহি, যা জাতিসংঘের সব উন্নয়ন সিস্টেম সহযোগিতা কর্মসূচির পথনির্দেশক মূলনীতি—‘কেউই পেছনে পড়ে থাকবে না’ নিশ্চিত করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মুস্তফা কামাল এবং মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো।
ফাতিমা ইয়াসমিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেমওয়ার্ক, যা এলডিসি থেকে উত্তরণ থেকে শুরু করে মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা পর্যন্ত বড় পরিসরে জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে এবং এসডিজি অর্জনে আমাদের পথনির্দেশনা দেবে।’
কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্কের পাঁচটি কৌশলগত অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী তাঁর বক্তব্যে বক্ত্ব্য বলেন, ‘এসব কৌশলগত অগ্রাধিকার মানবাধিকারের সুরক্ষা ও অনুশীলনে সর্বজনীনতা, সমতা ও ন্যায্যতার মূলনীতি অনুসরণ করবে। বাংলাদেশ যেহেতু অসমতা হ্রাসের চেষ্টা করছে, কাজেই অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার নীতি ও কর্মসূচিগুলো হতে হবে অপেক্ষাকৃত আরও সুনির্দিষ্ট এবং বিশেষভাবে প্রান্তিক ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তাগুলো চিহ্নিত করতে হবে, যাদের অনেকেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চক্রাকারে দারিদ্র্যপীড়িত এবং সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিবেচনার বাইরে রয়েছে। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার আজ এমন একটি কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্কের উদ্বোধন করছে, যা ওই মানুষগুলো পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের চুক্তি হিসেবে কাজ করবে।’
উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সংস্থাগুলো, তহবিল ও কর্মসূচি স্বাধীনতার সময় থেকেই বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ও বিশ্বস্ত অংশীদার এবং উল্লেখযোগ্যভাবে সার্বিক উন্নয়ন অর্জনে তারা ভূমিকা রেখেছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘…দেশের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা ও কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব কাটাতে মধ্যবর্তী কৌশল বাস্তবায়নে, অতীত সাফল্যের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত অর্থনীতির মর্যাদা অর্জনে টেকসই পথরেখা তৈরিতে এই কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক দৃঢ়ভাবে সহযোগিতা করবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এই ফ্রেমওয়ার্ক সরকারকে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন—উভয় পদক্ষেপেই, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক সুশাসনে সহযোগিতা করবে এবং এটি জেন্ডারসমতা নিশ্চিত করবে ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নির্মূলে সরকারের হাত শক্তিশালী করবে।’
পুরো নথিটি পড়ুন এখানে:
United Nations Sustainable Development Cooperation Framework (UNSDCF) 2022-2026